জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

Hepatitis-C: নীরব ঘাতক ব্যাধি "The Silent Killer”

Hepatitis-C: নীরব ঘাতক ব্যাধি "The Silent Killer”



Hepatitis-C কে বলা হয় নীরব ঘাতক ব্যাধি "The Silent Killer"।

Hepatitis-C বর্তমান বিশ্বে এইডস এর পরেই তার ভয়াবহতার জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয় দেখা দিয়েছে।
অন্যান্য Hepatitis যেমন Hepatitis-A, Hepatitis-B,এর জন্য Vaccine বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হলেও এইডস এর মত Hepatitis-C এর জন্য কোনো প্রতিষেধক টিকা বের হয়নি।

সময় মত নির্ণয় ও চিকিৎসা না করালে তা Chronic Liver disease এ পরিণত হয় যার পরিণতি
Liver cancer, Fibrosis, liver Cirrhosis আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যু।



একমাত্র প্রতিরোধই হছে Hepatitis-C থেকে বাঁচার উপায়।
বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ঠিক কত শতাংশ এই Virus এ আক্রান্ত তার সঠিক কোনো
শুমারি না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন মোট জন সংখ্যার শতকরা ২.৪-৩ ভাগ এই Virus এ আক্রান্ত।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশের নাম মিশর। দেশটাতে ১৮.১ শতাংশ এই VIRUS এ আক্রান্ত।
দ্বিতীয় স্থানে আছে ক্যামেরুন ১২.৫ আফ্রিকার কয়েকটি দেশ বলিভিয়া ১১.২ ভাগ আক্রান্ত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 8 মিলিয়নেরও বেশি Hepatitis-C আক্রান্ত রোগী আছে যেখানে প্রতি বছর গড়ে ১৭০০০ এরও বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
কানাডায় ২৫০০০০ এর ও বেশি Hepatitis-C আক্রান্ত রোগী রয়েছে।(তালিকাটা অত্যন্ত বিশাল,পাঠককে একটু ধারনা দেয়ার জন্য দুটি উদাহরণ দিলাম)
আসুন আমরা দেখি এই রোগ কি করে ছড়ায়:
Hepatitis-C মূলত রক্ত এবং রক্ত সংবহন থেকে ছড়ায় যথা,আক্রান্ত রোগীর রক্ত ব্যবহার,



IV বা সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক নেয়া,শরীরের কোনো অঙ্গ অর্গান)নেয়া প্রধান কারণ বলে এখনো বিবেচিত হচ্ছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অস্রপাচার,ডেন্টিস্ট এর যন্ত্রপাতি,Hemodialysis,সেলুন এ ব্যবহৃত ক্ষুর,ব্লেড,রেজর(যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত লেগেছে)থেকেও।
একজন Hepatitis-C আক্রান্ত ব্যক্তি তার পরিবারের জন্য মোটেও সংক্রামক নন হাঁচি,কাশি,লালা,চুম্বন থেকে এই Virus
ছড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।
বলা হয়ে থাকে অনিরাপদ যৌন-সম্পর্ক থেকেও এটা ছড়ায় যদিও এখন পর্যন্ত এর পক্ষে শক্ত কোন প্রমাণ এবং পরিসংখ্যান
বা নির্ভর যোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি তারপরও Hepatitis-C আক্রান্ত ব্যক্তিকে যৌন মিলনের ব্যাপারে নিরাপদ
কিছু ব্যবহারের উপদেশ বিশেষজ্ঞগণ দিয়ে থাকেন(যেমন কনডম)।

যেহেতু একমাত্র রক্তের মাধ্যমে এটা ছড়ায় তাই সচেতনতা জরুরী।আমরা ইচ্ছে করলে খুব সহজেই এই ভয়াবহ ভাইরাস থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারি।

কিভাবে জানবেন আপনি আক্রান্ত হয়েছেন:

Hepatitis-C আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ভাইরাস ১০/১৫ এমন কি ২০ বছর কোনো উপসর্গ তৈরি করা ছাড়াই
বসবাস করতে থাকে।আক্রান্তের লিভারের মধ্যে নিজস্ব প্রোটিন বন্ধন তৈরি করে সুরক্ষিত অবস্থান নেয়।

যেহেতু কোনো উপসর্গ ছাড়াই দিনের পর দিন Virus লিভার এর কোষে অবস্থান নেয় এতে করে লিভারের এনজাইম যেমন SGPT,SGOT,
Billirubin এর মাত্রা বেড়ে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে,,এই অস্বাভাবিকতা লিভারের প্রদাহের ইঙ্গিত করে।
যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা নিম্নোক্ত টেস্ট গুলো আপনার চিকিৎসক দিয়ে করাতে পারেন:
Anti-HCV,HCV Ab Test যদি রিয়েক্টিভ বা পজিটিভ হয় তবে ধরে নিতে হবে আপনিও সেই সব আক্রান্তের দলে চলে এসেছেন
এছাড়াও লিভার আলট্রাসাউন্ড টেস্ট করালেও অনেক সময় লিভারের কোন পরিবর্তন দেখা যাছে কিনা সেটা বোঝা যায়,এসব ক্ষেত্রে
সাধারণত spleen বড় হয়ে যায় এবং ক্রনিক লিভার ডিজিজের ইংগিত পাওয়া যায়।

HCV আক্রান্তের চিকিৎসা শুরু করবার আগে যেটা নিশ্চিত হতে হয় তা হল ভাইরাসের RNA(পরিমাণ ও ধরন)এবং Genotype(PCR) নির্ণয়।
দুঃখ জনক হলেও সত্য বাংলাদেশে একমাত্র ICDDRB ছাড়া অন্যকোন ল্যাব গড়ে উঠেনি(এসব মলিক্যুলার বায়োলজি টেস্ট)শুনেছিলাম BIRDEM হাসপাতালে এই টেস্টগুলো হয়ে থাকে
(তথ্যটা কেউ জানালে কোন রোগীর কাজে আসতে পারে)।
বর্তমানে বাংলাদেশে দুই তিনটি প্রতিষ্ঠান ভারত এবং সিংগাপুরে রক্ত পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করছে।যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

Genotype কে চিকিৎসকরা ১ থেকে ৬ ভাগে বিভক্ত করেছেন। Genotype ১ এবং ৪ চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী ৪৮ সপ্তাহ
২ এবং ৩ ২৪ সপ্তাহ ৫ এ বং ৬ আফ্রিকান দেশ সমূহে বেশী আমরা সে প্রসঙ্গে যাবনা।
এই যে চিকিৎসার কথা উল্লেখ করা হলো সেটা সর্বশেষ সংস্করণ একে বলা হয় পেগাসিস থেরাপি Peg interferon alfa-2a 180mcq এবং টেবলেট রিভাবিরিন।
এছাড়াও Inj.Interferon দেয়া হয় থাকে।

এই চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এর পার্শ্ব পতি ক্রিয়া এতো বেশী যে রোগী তা সইতে পারেন না।
থেরাপি চলা কালে রোগী আত্মহত্যা প্রবণ হতে পারে।
তার ব্লাড সুপার বেড়ে যায়,রক্ত চাপ বেড়ে যায়,রক্ত জমাট বাধতে যে কণিকাটি সাহায্য করে থাকে সেই প্লেটেলেট দ্রুত কমতে থাকে।
এসময় রোগীকে ডিসপ্রিন জাতীয় ঔষধ খেতে বারণ করা উচিত।
থেরাপি চলাকালীন সময়ে যৌন মিলন বন্ধ রাখা উচিত।

আবারও বলছি হেপাটাইটিস থেরাপি যেহেতু অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা তাই দক্ষ হেপাটোলজিশ্ট/ভাইরোলজিশ্টের কাছে যান।
এই থেরাপিগুলো ভাইরাস নির্মূলের (ACHIEVEMENT)শতভাগ নিশ্চয়তা দেয়না আর তাই এখনো আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ গুলোকে।
উৎপাদক বহুজাতিক কোম্পানিগুলো রোগীকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করছে।

এতো হতাশার মধ্যেও Boceprevir,Telaprevir নামে দুইটি protease inhibitor এফডিএ অনুমোদনের
অপেক্ষায় আছে যার প্রাথমিক সফলতার হার অতীতকে ছাড়িয়ে প্রায় ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে চিকিৎসকরা দাবী করছেন।
ইন্টারফেরনের মত সাপ্তাহিক নয় মাস মাত্র ১টি ডোজ!সু-সহনীয়!

পরিশেষে একটি কথা-ই বলতে চাই।ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলুন।সকল প্রকার অসামাজিক অনাচার থেকে নিজেকে বাঁচান,পরিবারকে,সমাজকে বাঁচান।
আর "মাদককে না বলুন।"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন