জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১২

প্রসঙ্গ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন: ভাগ করেছেন, করেছেন এবার ভোগ করতে দিন

প্রসঙ্গ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন: ভাগ করেছেন, করেছেন এবার ভোগ করতে দিন



সৌদি আরবের সিটি কর্পোরেশনের নাম বলদিয়া। এই লেখাটি শুরু করার আগে "বলদিয়া" সম্পর্কে কছু বলি:-
এরা গোটা নগরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছে। নির্দিষ্ট এলাকার জন্য কয়েকজন "বলদিয়া"র পরিদর্শক আছেন।
যারা সাধারণ পোশাকে, সাধারণ গাড়িতে করে,অনেক সময় নির্দিষ্ট গাড়িতেও জন-স্বাস্থ্য,সেবামূলক প্রতিষ্ঠান১ঃগ৬৫১হোটেল রেস্তোরা, মুদি, সবজি ও কাঁচামাল , ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, লন্ড্রি ঔষধের দোকান, নগর পরিচ্ছন্নতায় নিয়োজিত ইত্যাদি কাজের তদারকি করেন।

হোটেল রেস্তোরায় এরা যা নিশ্চিত করেন
:-ট্রেড লাইসেন্স, বাসী-পচা খাবার, খাবারে ভেজাল, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মাছি, তেলাপোকা-ইঁদুর অন্যান্য রোগ-বাহিত কিট-পতঙ্গ আছে কিনা।
কর্মরত সকলের "বলদিয়া কার্ড" আছে কিনা। এই কার্ড পেতে হলে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ যেমন আমাশয়, কৃমি, যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস ইত্যাদি আছে কিনা তা পরীক্ষা করাতে হয়।
কার্ড বিহীন অবস্থায় কাউকে পেলে গ্রেফতার এবং জরিমানা। মাছি, তেলাপোকা এবং অন্যান্য কিট-পতঙ্গ, নোংরা পরিবেশের জন্য জরিমানা, দ্বিতীয়বার ডাবল, তৃতীয়বার প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

মুদি, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর: সকল ধরনের খাবার স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং অনুমোদিত কিনা, মেয়াদ আছে কিনা দেখা হয়। (কর্মরত সবার বলদিয়া কার্ড বাধ্যতামূলক) মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পর সাজিয়ে রাখলে, বিক্রি করলে জরিমানা, গ্রেফতার এখানেও একই বিধান।

সিগারেট: শো-কেসে সাজানো নিষেধ। দেখা যায় এমন জায়গায় রাখা নিষেধ।

সেলুন: নরসুন্দরের বলদিয়া লাইসেন্স থাকতে হবে। প্রতিবার চুল কাটার পর সাফ করতে হবে। নতুন টাওয়েল দিতে হবে। ডিজপোজেবল কিট ব্যবহার করতে হবে। খুর বা ব্লেড ব্যবহার নিষিদ্ধ।কাঁচি-চিরুনি অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করা বাধ্যতা মূলক।
ফলমূল-শাক-সবজি: বিদেশী নাগরিকদের জন্য বিক্রয় পেশা নিষিদ্ধ (মাঝে মধ্যে দেখা যায় প্রবাসীরাও বিক্রি করছে তবে ধরা পড়লে নিশ্চিত দেশে প্রত্যাবর্তন)।
ফুটপাতে দোকান, খাবার কেনা-বেচা নিষিদ্ধ।

নগর পরিছন্ন কর্মীরা পালাক্রমে গাছের পরিচর্যা করা, রাস্তা ঘাট পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত।
রিয়াদকে বলা হয়,"দি ক্লিন সিটি" পেপসি ক্যান, বোতল কিম্বা অন্য কোনো উচ্ছিষ্ট যত্র-তত্র ফেলা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলদিয়ার পরিদর্শকের হাতে ধরা পড়লে ২০০ রিয়াল নগদ জরিমানা।
ফার্মেসি : একমাত্র ফার্মাসিস্ট ছাড়া অন্য কারো পক্ষে ঔষধ বিক্রয় করা নিষিদ্ধ, ড্রাগ লাইসেন্স থাকা জরুরি।
পানি এবং পয় নিষ্কাশন: প্রতিটি বাড়ির সামনে পানির মিটার বসানো বাধ্যতা মূলক। এছাড়া এরা নিয়মিত বাড়িঘর পরিদর্শন করে এটা নিশ্চিত করেন যে কোথাও পানির অপচয় হচ্ছেনা, নল খোলা নেই,বাড়ির ভেতরে সকল পয়ঃনিষ্কাসন ব্যবস্থা ঠিক আছে।
বাংলাদেশ মত কখনো উপচে পড়া "ইয়ে" দেখিনি!
বাড়ি ঘর নির্মাণ তথা তদারকি: বাড়ি নির্মাণ করতে হলে তাদের অনুমতি লাগবে।

সিটি কর্পোরেশন এর পরিদর্শক দিনভর ঘুরে বেড়াচ্ছে কেউ চিনতে পারছেনা, অথচ সময় মত সঠিক কাজটি করছে ।

আমাদের সরকার আলোচিত সমালোচিত সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগে ভাগ করেছেন। বলা হচ্ছে সেবার মান বাড়াতে এটি করেছেন। তাদের উদ্দেশ্য যদি সৎ হয় তবে সাধুবাদ।
অতীতে আমরা যা দেখেছি মেয়র হানিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি তথা ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি নগরবাসীর জন্য কিছুই করতে পারেন নি।

সাদেক হোসেন খোকা দীর্ঘদিন মেয়র ছিলেন, তিনিও নগরবাসীর জন্য কিছুই করেন নি। আমাদের কোনো নাগরিক সুবিধা-ই বাড়েনি।
সরকার সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ।

অতীতের সকল মেয়র নগরবাসীর জন্য নয় নিজেদের কর্মস্থলকে দুর্নীতির আখড়া, সন্ত্রাসী ও টেন্ডার-বাজদের আখড়া বানিয়ে গেছেন; পরিবহন পুলের গাড়ির অপ-ব্যবহার, যন্ত্রাংশ কেনা, মেরামত, তেল ক্রয়ে, পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত Wheel Loader, Sweeper Machine ইত্যাদি কেনায় কোটি কোটি টাকার ঘাপলা হয়েছে, লুটপাট হয়েছে।

আমাদের দেশে ফুটপাত, মার্কেট, কাঁচা বাজার এবং বিভিন্ন পার্কিং স্পট গুলোর মালিক ডিসিসি। ফলে যারা যখন ক্ষমতায় তাদেরই দলের লোকজনের হাতে পার্কিং স্পট, গরুর হাট, বাজার লিজ-নিলাম দেয়া হয়েছে, ফুটপাত বেদখল হয়েছে। দুঃসহ ট্রাফিকে নগরবাসী দিন কাটছে।

খাদ্যে ভেজাল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলেছে। দেখা গেছে সকল মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠন এদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সরকার নিজের ভোটে নিজে লাথি দিতে চায়না তাই ফুটপাত থাকে,টেন্ডার-বাজ থাকে।

পরিদর্শক হয় ও,এস,ডি না হয় বদলী ! এমন অবস্থা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।

অনেককে-ই দেখি সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে বলেন,বিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন মানে-ই রাজধানী ভাগ নয়, এটা করা হয়েছে জনগণের সেবার মান বাড়াতে!
আমরা নগরবাসীরা যুক্তির খাতিরে তা মানতে রাজী নই।
যারা বিভাজনের পক্ষে সেই সরকার এবং তাঁদের অনুগতদের উদ্দেশে বিনীত নিবেদন, "আপনার-আমার সরকারকে জিজ্ঞাসা করুন তাঁরা কি আদৌ পারবে আধুনিক, দুর্নীতিমুক্ত, দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে এসে এক সিটি কর্পোরেশন জনগণকে উপহার দিতে?
যেখানে মার্কেটের পার্কিং লিজ দেয়া হবেনা, ৫ তাঁরা বাহিনীর মত টেন্ডার-বাজরা নগরভবন দখল করে রাখবে না। খাদ্যে ভেজাল, মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার, খোলা খাবার, ঝুপড়ি হোটেল, চা-দোকান ফুটপাত থাকবেনা, সরকারি জায়গা বেদখল হবেনা। এসব প্রতিরোধে সৌদি আরবের বলদিয়ার মত নিঃস্বার্থ, সৎ আর গণ-বান্ধব আইন করে তার বাস্তবায়ন করতে?"

নাকি পুরনো বোতলে নতুন মদ ঢেলে কাব্যগড়া, "দিনে রাতে মশা আর মাছি এই নিয়ে বিভক্ত ঢাকায় বেশ আছি !!"
নতুন কিছু থাকলে আপনারা বলেন যোগ করি করি,,,,,,
ছবি: নিউএজ এবং ইন্টারনেট এর সৌজন্যে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন