জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১২

প্রাক-বাজেট আলোচনা: প্রত্যাশা- ১


আর কিছুদিনের মধ্যে দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ গন জাতীয় বাজেট প্রণয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় জাতীয় সংসদে তাঁর বাজেট পেশ করবেন।
জাতীয় বাজেট নিয়ে সচেতন মানুষ, ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদ আর বুদ্ধিজীবীদের আগ্রহের শেষ নেই।
সাধারনতঃ বাজেটগুলোর চেহারা যেমন হয়ে থাকে:
নির্বাচনের সময় বা আগে সাধারণ মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো ভুলে গিয়ে বাজেট প্রণীত হয়।
জাতীয় বাজেটে হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে।
প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে বলে ঘোষণা আসবে। অনেক আশার কথা বলা হবে।
বিদেশী অর্থ সাহায্য প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক উন্নয়ন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
নতুন নতুন কর আরোপ করা হবে।
''আমাদের কাছে আলাদীনের চেরাগ নেই''..প্রধানমন্ত্রী(তাই বাজেটে নতুন কোন চমক থাকবেনা)।
বাজেটে যত রঙিন ফানুস উড়ানো হয়, তার কোনকিছু বাস্তবে অর্জিত হয় বলে আমার জানা নেই।
বাজেটে আর যাই থাকুক গরিবের জন্য, দারিদ্রসীমার নীচে যারা বসবাস করছে তাঁদের জন্য কিছু থাকবেনা বলেই আমার ধারণা।
কৃষিক্ষেত্রে বীজ, সার ও কীটনাশকের ওপর শতকরা ১০০ ভাগ ভর্তুকি চাই। বোরো মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ভর্তুকি এবং বিতরণ নিয়ে যে সমালোচনা চলছে এবং সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে সেই বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের অভাবে
দেশে উৎপাদন এবং বিনিয়োগের যে বেহাল দশা তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় এটা মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
বাজেটে কি থাকছে, না থাকছে তা নিয়ে নয়; আজ বরং আসন্ন বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শিক্ষাকে পৃথিবীর সকল দেশ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
আমাদের দেশেও শিক্ষা খাতে বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ থাকে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
শিক্ষার প্রসারে এবং আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে যে সকল বিষয় অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি, সেগুলো হলো
১) কারিগরি শিক্ষার প্রসার (কম্পিউটার, যন্ত্র, বিদ্যুৎ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, হস্তশিল্প, কাঠের কাজ, অটোমোবাইল ইত্যাদি সহ সকল কারিগরি শিক্ষা)
কে গুরুত্ব দিয়ে দেশের সর্বত্র কারিগরি শিক্ষালয় খোলার জন্য সরকারী অনুদান রাখা হোক।
২) জনসংখ্যার ঘনত্ব হিসেবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারী বিদ্যাপীঠ গড়ে তোলার জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করা হোক।
৩) বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারী ও বেসরকারি শিক্ষালয়ে ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণ ও কারিগরি শিক্ষায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হোক।
৪) সকল শিক্ষা উপকরণ, বিশেষত: বই, খাতা, কাগজ (সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট), কলম, পেন্সিল, স্কুল ব্যাগ ইত্যাদির ওপর আমদানি শুল্ক ও মুসক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হোক।
সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট কাগজের উৎপাদন বাড়াতে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের কাগজ কলগুলোকে সরকারী অর্থায়নে পুনরায় চালু করা হোক।
মুদ্রণ শিল্প এবং সংবাদপত্র শিল্পগুলো যেহেতু শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা রাখে, সেহেতু প্রকাশনা শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল যেমন রং ও কেমিক্যাল,
মুদ্রণ যন্ত্র, সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট কাগজ ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে সকল কর ও মুসক প্রত্যাহার করা হোক।
৫) সকল আবাসিক স্কুল কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসন ব্যবস্থার মান উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হোক।
এছাড়া সকল আবাসিক শিক্ষালয়ের ক্যান্টিনে অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও সরবরাহ বন্ধে এবং স্বাস্থ্যকর, মানসম্পন্ন ও পুষ্টিকর খাবার যোগানে সরকারী অনুদান দেয়া হোক।
শিক্ষার প্রসারই পারে আমাদের মত একটি উন্নয়নশীল জাতিকে স্বাবলম্বী করতে।
সময়ের প্রয়োজনে সকল উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই শিকার করছেন।
আমাদের দেশে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের সন্তানদের মানসম্পন্ন লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পারার কারণে অনেক প্রতিভা বিকশিত হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠবে, দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে। এই দক্ষ জনশক্তি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে প্রেরণ করলে প্রচুর
প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। (চলবে)