জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

রগরগে বিজ্ঞাপন: স্বপ্নে-প্রাপ্ত বটিকা,রুহানী সাধকের ঝাড়-ফুঁক, বশীকরণ তাবিজের জয়-জয়কার

রগরগে বিজ্ঞাপন: স্বপ্নে-প্রাপ্ত বটিকা,রুহানী সাধকের ঝাড়-ফুঁক, বশীকরণ তাবিজের জয়-জয়কার

সপ্তাহের পাঁচটি দিন পরিশ্রম করে হাঁপিয়ে উঠি.. অপেক্ষায় থাকি সপ্তাহান্তের... দু'টি দিন বন্ধ, ভাবতেই সকল ক্লান্তি, শ্রান্তি চলে যায়... এ সপ্তাহে কোথায় যাব ভাবছিলাম...
এক বন্ধু ফোন করলো। বললো, 'চলে আসো এখানে, পার্টি হচ্ছে।'কিসের পার্টি?আরে আগে আসো না !
তার ওখানে গিয়ে দেখলাম ২৮/৩০ জনের জমায়েত; খুউব হৈ চৈ হচ্ছে।
জানা গেল, এদেশে ‘থাইল্যান্ডি’ নামে একটি লটারি খেলা হয় অত্যন্ত গোপনে, সৌদি আইন অনুযায়ী এসব অবৈধ।
বলা হয় যে এই লটারির আয়োজন করা হয় থাইল্যান্ড থেকে। ড্র হয় সেখান থেকে।গোটা সৌদি জুড়ে এদের রয়েছে সুবিশাল নেটওয়ার্ক।
প্রবাসীদের এক বিরাট অংশ রাতারাতি ধনী হবার স্বপ্নে এই লটারি নিয়মিত খেলে থাকে বলে শোনা যায়।
ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য যার আদ্যক্ষর ‘ক’ দিয়ে শুরু ,মূলত এরাই এর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে প্রকাশ।
স্হানীয় মুদ্রায় ২।৫।১০।২০।৫০।….যার যত খুশি টাকা বাজি ধরতে হয়।যে কোন তিনটি নাম্বার উপর থেকে নিচে।
ডান থেকে বামে লিখতে হয় যেমন ৮৭০ বা ৮০৭। প্রতি মাসে ১ এবং ১৫ তারিখে ড্র হয়।
এই লটারির মোহে পড়ে অনেক বাঙালি সর্বস্ব খুইয়েছে।নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
হঠাৎ করে নাকি একজনের ভাগ্য খুলে গেছে! সে অনেক টাকা পেয়ে গেছে।
তার আনন্দে দুম্বা জবেহ্ হয়েছে।
এখানে যারা এসেছে তাদের অধিকাংশই শুধু বলাবলি করছিল, ইশ্ মাত্র একটা নাম্বার, উফঃ!
সামনে দিয়া গেল, কেউ বললো, 'তোর পীর বাবায় কি কয়!’আরে ধ্যাৎ ! শালায় ভাওতাবাজ!

আমি ক্রমান্বয়ে আগ্রহী হয়ে উঠি! তাদের মুখের দিকে নীরবে তাকিয়ে থাকি; এদের ৯০ ভাগই অশিক্ষিত, অদক্ষ শ্রমিক - যাদের মাসিক বেতন অস্বাভাবিকভাবে কম।
আজকে যিনি লটারি জিতেছেন তাকে খুউব সচ্ছল মনে হলো!

মনে একটি আশঙ্কার কথা উঁকি দিয়ে গেল; হতাশ হয়ে পড়া এই নিরীহ লোকগুলোকে উজ্জীবিত করতে এটি আয়োজকদের কোনো ‘মার্কেটিং প্লান’ নয়তো!হবে হয়তো তাই।
অনেকের হাতে দেখলাম একজন নামকরা প্রকাশক, সম্পাদকের ম্যাগাজিন।ম্যাগাজিনটি 'একটি বিশেষ' ঘরানার বলেও পরিচিত।
এখানে এটির বিপুল জনপ্রিয়তার (একটি বিশেষ মহলে সমাদৃত) একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয় সব বিজ্ঞাপন!
বাংলাদেশের যত ভণ্ড, স্বপ্নে প্রাপ্ত বটিকা বিক্রেতা, রুহানি-শক্তি, আধ্যাত্মিক সাধকের ১০০ ভাগ গ্যারান্টি,কবরেজ মশাইগণ ক্যান্সারসহ সকল চিকিৎসার গ্যারান্টি দিয়ে থাকেন!
এই পত্রিকার কয়েকটি বিজ্ঞাপনে দেখা গেলো সাধক বাবা তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতার বলে লটারির নির্ধারিত সংখ্যাগুলো টেলিফোনে বলে দেন!এসব আবার গ্যারান্টিও দেয়া হয়েছে!
বুজরুকি, ভণ্ডামি প্রতিদিন আমাদের চোখের সামনে অহরহ ঘটছে।
বিপদগ্রস্ত লোকজন সন্তান লাভের আশায়, প্রেম-প্রণয়ে সাফল্য, কায়-কারবারে উন্নতি, বিদেশ গমন, যৌন-স্বাস্হ্য, ক্যান্সারসহ নানা জটিলতায় তাদের কাছে ছুটছে!
কত সহজে, প্রকাশ্যে এরা জনগণকে প্রতারিত করছে।
গোটা বিশ্ব যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে বশ করে শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে যাচ্ছে আমরা তখনও অন্ধবিশ্বাস নিয়ে ছুটে চলেছি ভণ্ডপীরের দরগায়,
ভণ্ড সাধক, যাদুটোনা, বাণমারা করে বশীকরণ করতে।
এসব দেখার জন্য কেউ কোথাও আছে বলে আমার মনে হয় না।
আপনার কী মনে হয়?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন