জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১২

প্রাক-বাজেট আলোচনা: প্রত্যাশা- ১


আর কিছুদিনের মধ্যে দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ গন জাতীয় বাজেট প্রণয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় জাতীয় সংসদে তাঁর বাজেট পেশ করবেন।
জাতীয় বাজেট নিয়ে সচেতন মানুষ, ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদ আর বুদ্ধিজীবীদের আগ্রহের শেষ নেই।
সাধারনতঃ বাজেটগুলোর চেহারা যেমন হয়ে থাকে:
নির্বাচনের সময় বা আগে সাধারণ মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো ভুলে গিয়ে বাজেট প্রণীত হয়।
জাতীয় বাজেটে হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে।
প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে বলে ঘোষণা আসবে। অনেক আশার কথা বলা হবে।
বিদেশী অর্থ সাহায্য প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক উন্নয়ন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
নতুন নতুন কর আরোপ করা হবে।
''আমাদের কাছে আলাদীনের চেরাগ নেই''..প্রধানমন্ত্রী(তাই বাজেটে নতুন কোন চমক থাকবেনা)।
বাজেটে যত রঙিন ফানুস উড়ানো হয়, তার কোনকিছু বাস্তবে অর্জিত হয় বলে আমার জানা নেই।
বাজেটে আর যাই থাকুক গরিবের জন্য, দারিদ্রসীমার নীচে যারা বসবাস করছে তাঁদের জন্য কিছু থাকবেনা বলেই আমার ধারণা।
কৃষিক্ষেত্রে বীজ, সার ও কীটনাশকের ওপর শতকরা ১০০ ভাগ ভর্তুকি চাই। বোরো মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ভর্তুকি এবং বিতরণ নিয়ে যে সমালোচনা চলছে এবং সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে সেই বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের অভাবে
দেশে উৎপাদন এবং বিনিয়োগের যে বেহাল দশা তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় এটা মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
বাজেটে কি থাকছে, না থাকছে তা নিয়ে নয়; আজ বরং আসন্ন বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শিক্ষাকে পৃথিবীর সকল দেশ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
আমাদের দেশেও শিক্ষা খাতে বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ থাকে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
শিক্ষার প্রসারে এবং আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে যে সকল বিষয় অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি, সেগুলো হলো
১) কারিগরি শিক্ষার প্রসার (কম্পিউটার, যন্ত্র, বিদ্যুৎ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, হস্তশিল্প, কাঠের কাজ, অটোমোবাইল ইত্যাদি সহ সকল কারিগরি শিক্ষা)
কে গুরুত্ব দিয়ে দেশের সর্বত্র কারিগরি শিক্ষালয় খোলার জন্য সরকারী অনুদান রাখা হোক।
২) জনসংখ্যার ঘনত্ব হিসেবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারী বিদ্যাপীঠ গড়ে তোলার জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করা হোক।
৩) বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারী ও বেসরকারি শিক্ষালয়ে ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণ ও কারিগরি শিক্ষায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হোক।
৪) সকল শিক্ষা উপকরণ, বিশেষত: বই, খাতা, কাগজ (সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট), কলম, পেন্সিল, স্কুল ব্যাগ ইত্যাদির ওপর আমদানি শুল্ক ও মুসক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হোক।
সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট কাগজের উৎপাদন বাড়াতে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের কাগজ কলগুলোকে সরকারী অর্থায়নে পুনরায় চালু করা হোক।
মুদ্রণ শিল্প এবং সংবাদপত্র শিল্পগুলো যেহেতু শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা রাখে, সেহেতু প্রকাশনা শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল যেমন রং ও কেমিক্যাল,
মুদ্রণ যন্ত্র, সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট কাগজ ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে সকল কর ও মুসক প্রত্যাহার করা হোক।
৫) সকল আবাসিক স্কুল কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসন ব্যবস্থার মান উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হোক।
এছাড়া সকল আবাসিক শিক্ষালয়ের ক্যান্টিনে অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও সরবরাহ বন্ধে এবং স্বাস্থ্যকর, মানসম্পন্ন ও পুষ্টিকর খাবার যোগানে সরকারী অনুদান দেয়া হোক।
শিক্ষার প্রসারই পারে আমাদের মত একটি উন্নয়নশীল জাতিকে স্বাবলম্বী করতে।
সময়ের প্রয়োজনে সকল উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই শিকার করছেন।
আমাদের দেশে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের সন্তানদের মানসম্পন্ন লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পারার কারণে অনেক প্রতিভা বিকশিত হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠবে, দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে। এই দক্ষ জনশক্তি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে প্রেরণ করলে প্রচুর
প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। (চলবে)

শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার……….আমরা জেগে আছি

সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার……….আমরা জেগে আছি


মহান ভাষা আন্দোলনে আত্ম-উৎসর্গকারী সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে
একুশের প্রভাত ফেরি লাখো কণ্ঠের মৌন মিছিলে এগিয়ে চলে! ফুলে ফুলে সুশোভিত বাঙালির চেতনার মিনার, শহীদ মিনার।
****
১৯৫২ থেকে ২০১২, পথ পরিক্রমায় ৬০ বছরে পদার্পণ করেছি আমরা।
এই ৬০ বছরে আমাদের অর্জন, গোটা বিশ্বের দরবারে আমরা সমাসীন হয়েছি আত্ম-মর্যাদাবান এক জাতি হিসেবে।
একাত্তরের অগ্নি-ঝরা মার্চে গর্জে উঠা কণ্ঠস্বর, নির্বিচার গণহত্যা, প্রতিরোধ, গেরিলা যুদ্ধ, বিচ্ছু বাহিনীর মরন- পণ লড়াই---
****
ম হা ন স্বা ধী ন তা। আমার মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বেদনায় জাতীয় প্রাপ্তি ম্রিয়মাণ ছিল স্বাধীনতা লাভের ৪০ বছর পর্যন্ত।

****
১৯৪৮-১৯৫২ সালে ভাষার দাবীটি জোরালো হওয়ার পিছনে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বীর বাঙালির গর্জে উঠার পেছনের ইতিহাস আমরা সবাই জেনেছি।
সেদিন অত্যন্ত সুকৌশলে আমাদের ভিতর সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয়েছিল! পশ্চিম পাকিস্তান বাংলা ভাষাকে হিন্দুদের ভাষা এবং উর্দুই মুসলমানদের ভাষা হওয়া উচিত বলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করতে চেয়েছিল।

মহান ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা ছিল অধিকার আদায়ের, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বীর বাঙালির ঝলসে উঠা।

****
এবারের আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস নানা কারণে অত্যন্ত মহিমান্বিত। ১৯৭১-এর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি এতদিন তা একেবারেই নিষ্প্রভ ছিল। এই সুদীর্ঘ সময়ে আমরা ঘাতক-দালাল, ধর্ষক-খুনি, মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে ব্যর্থ ছিলাম।

ধর্মকে পুঁজি করে যারা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বে-পথু করছে যারা ধর্মের অপ-ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের গা বাচাতে এর-ওর কাঁধে ভর করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে, যাদের হৃদয় সাম্প্রদায়িকতার বিষ-বাষ্পে ভরা, যারা নিজেদের প্রয়োজনে ফতোয়া দেয়, স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙ্গতে যায়---

তাদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠা আজকের প্রজন্ম এসো মহান একুশের প্রারম্ভে আজকে আবার নতুন করে শপথ করি,
"আমার মা ,আমার বোন, আমার ভাইয়ের হত্যাকারী, মানবতা বিরোধী অপরাধী আমরা তোমাদের রুখে দেব।"

আমাদের বর্ণমালা, আমাদের লাল সবুজ, এই দেশ তোমার আমার সকলের।
আত্ম মর্যাদা-শীল এক জাতির সন্তান হিসাবে আমরা গর্বিত। ৭১-এর মানবতা-বিরোধী অপরাধীদের বিচারেই আমরা প্রশস্তি পাব।

মহান ভাষা আন্দোলনে সকল লড়াকু সেনানী, আত্ম-উৎসর্গকারী সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ধন্যবাদ।

ছবি: ইন্টারনেট

রায়ঠাকুরানী অমর হবে




মেঘ খণ্ড। আকাশের চুড়োয় মেঘের মিনার।
শরতের আকাশ! ধবল পরী!
শূন্যে ঝুলে থাকা দুরন্ত ঈগল
এক মেঘ বালিকা, এক রাজকন্যা।

পাখিটা দিনভর নখরে, কামড়ে ক্ষতবিক্ষত
করে। স্বপ্ন? মুখ থুবড়ে পড়ে ভিন গ্রহে
পাশবিক চিৎকারে, শীৎকারে রক্ত ঝরায়
মেঘ তখনও ঝরে না। বিদ্যুৎ ঝলকায়।

পাখিটা কখনো তার ছিলনা। পাঁজরের হাড়
খুবলে খে'তো। ঔদ্ধত্যের কাছে আমরণ বশ্যতা।
তবু দিন শেষে পাখিটা নীড়ে ফিরে আসুক
তার ঘর, খড়-কুটো-মেঝ ভিজে যাক।

অনেক পরে বরফের বুকে মেঘ ঝরে।
বোবা কান্নায় বুকের ভেতর কঠিন শপথ
"যত কাল বাঁচি নিজেই হব পাখি
শিকারি। ঘর ছাড়া করে তবেই ক্ষান্ত।

বানর হবি? আমাজন যাবি!
পিগমিদের ঘর? আদিম বসতি?
কি চাস তুই! "মেঘ ভালো লাগেনা"
"মেঘ ভালবাসি না''। "ভালবাসতে জানিনা।"

তবু অরণ্যে পাতায় পাতায় ঘর্ষণে
দাবানল। গভীর অরণ্য, আদিম গুহা, সতেজ-সবুজ ঘাস।
উর্বর জমিন চাষ করে সুতীক্ষ্ণ লাঙ্গলের ফলা।
স্বপ্ন দেখায়। সাতরঙা রংধনু পাহাড়ের পাদদেশ।

মেঘ খণ্ড আকাশ ছুঁতে চায়। রায়ঠাকুরানী
অমর হবে। দাবানলের পোড়া জমিনে সারাক্ষণ
বারি বিন্দু হতে চায়। বজ্রপাতের সাথে সংযোগ
পেতে নতুন ফাঁদ পাতে। সারাক্ষণ বর্ষে।

সংযোগ কেটে যায় বৈদ্যিক ব্যথায়
অবকাশ নেই আকাশের নিচে ঝুলে থাকে ঠায়
প্রতিশোধের আগুনে ঝাপ দিতে
দিগন্তে পাখা মেলে। কুল কুল ঝরে অবিরাম।

তোমার বর্ষণে গজানো সতেজ-শস্য খেত
মাড়িয়ে গেছে বুনো-শূয়র, হায়েনার দল!
ঘন পাঁকে রাজহাঁসের গায়ে কাদা আটকে থাকে ?
ভুল পথে পা বাড়ালে নির্মম বজ্রপাতে মূর্তিমান--

বেচে থাকবে শুধু কবিতার 'খেরো খাতাতে'।

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

২৭ জন নির্বাচিত ব্লগারের লেখা “নগর নাব্য” একুশে বই মেলায় এসেছে।


২৭ জন নির্বাচিত ব্লগারের লেখা “নগর নাব্য” একুশে বই মেলায় এসেছে।


২৭ জন নির্বাচিত ব্লগারদের লেখা নিয়ে ব্লগ সংকলন “নগর নাব্য” একুশে বই মেলায় এসেছে।
বইটির প্রকাশক : শ্রাবন প্রকাশনী,
পাওয়া যাবে স্টল নং ১০৭-১০৮ এ ।

এতে লিখেছেন:-

১.বিভুতি ভুষন মিত্র
২.সাইফ ভুঁইয়া
৩.মাহফুজুর রহমান মানিক
৪.মোত্তালিব দরবারি
৫.আলী আহসান হাবিব
৬.মাতরিয়শকা ফিইচারিষ্ট
৮.ম.সাহিদ
৯.রাগ ইমন
১০.আব্দুল মোনেম
১১আইরিন সুলতানা
১২.প্রামানিক জালাল উদ্দিন
১৩.সগীর হোসাইন খান
১৪রাইসুল ইসলাম সৌরভ
১৫.ফকির ইলিয়াস
১৬.আশিকুর-নুর
১৭.কৌশিক আহমেদ
১৮.বাসন্ত বিষ্ণুব
১৯.হাবিবুর রহমান তারেক
২০.নুরুন্নাহার শিরিন
২১.মামুন ম.আজিজ
২২.নাজনীন খলিল
২৩.নাহুয়াল মিথ
২৪.তৌহিদ উল্লাহ শাকিল
২৫.জহিরুল চৌধুরী
২৬.রিতা রায় মিঠু
২৭.সারওয়ার চৌধুরী

সহমত ব্লগার বৃন্দ,বই প্রিয় বন্ধুদের জন্য আমার শুভেচছা থাকল। আশাকরি বইটি পাঠক প্রিয়তা পাবে।

তথ্য: ম, সাহিদ, আইরিন সুলতানা

বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস: শেষ পর্ব



পরদিন অর্থাৎ ২২শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ রাতের অন্ধকারে নির্মিত হলো দেশের প্রথম শহীদ মিনার।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের তৎকালীন ভিপি মাওলার উদ্যোগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র বদরুল আলম ভিক্টোরিয়া পার্কে সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতিস্তম্ভের আদলে প্রথম শহীদ মিনারের নকশা করেন।

৫ফুট উঁচু ও ৬ ফুট প্রস্থ স্তম্ভ প্রথম শহীদ মিনারটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের মির্জা মাজহারুল ইসলামের ঘরে বানানো হয়। (১)
ঐ রাতেই শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিক ভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।
স্তম্ভে বদরুল আলমের আঁকা দুটি পোস্টার ছিল যাতে লেখা ছিল":- "স্মৃতিস্তম্ভ" এবং "রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।"

পুরনো ঢাকার পঞ্চায়েত কমিটির পিয়ারু সর্দার ইট, বালু ও সিমেন্ট দিলে বর্তমান শহীদ মিনারের স্থানে
১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়া স্তম্ভটি হোস্টেলের ছাত্ররা নির্মাণ শ্রমিকদের সহায়তায় শহীদ মিনারটি তৈরি করে। (উইকিপিডিয়া)

২৩শে ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক আবুল মনসুর নামকরণ করেন ‍‍‍‍‍‍‍‍‍'শহীদ মিনার'। নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করার প্রতিবাদে এইদিন দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়।
ঐদিন-ই APCA ২৫ই ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের ডাক দেয় ।

২৪শে ফেব্রুয়ারি আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম সামসুদ্দিন 'শহীদ মিনার' আবারও উদ্বোধন করেন।

হরতালের পরদিন ২৬শে ফেব্রুয়ারি পুলিশ বুল-ডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দেয় ভাষা শহীদ স্মরণে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার।

ভাষা আন্দোলন ক্রমশ: রূপ নিলো স্বাধিকারের আন্দোলনে।

এরই মধ্যে রচিত হয়ে গেছে একুশের কালজয়ী গান, "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি"।
এটি প্রথমে কবিতা আকারে লিখেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী। কবিতাটি ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে প্রথম প্রকাশিত হয়।
তৎকালীন সরকার সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করে। পরবর্তীতে কবিতাটিই কালজয়ী গানে পরিণত হয়। গানটিতে প্রথম সুরারোপ করেছিলেন আব্দুল লতিফ।
পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদ গানটিতে সুরারোপ করেন।

*****
১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার উপলব্ধি করতে পারলো বাঙালি জাতিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই বছরের ৭ই মে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে এসেম্বলিতে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মত পাকিস্তান সরকারের ইতিবাচক/পরোক্ষ মনোভাবের মধ্য দিয়ে সারাদেশব্যপী শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
২৬শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়ে বিধান সভায় আইন গৃহীত হয়।
২৩শে মার্চ, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানের পরিবর্তন করা হয়।

সুদীর্ঘ আন্দোলন, বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতির প্রাণের দাবী প্রতিষ্ঠিত হলো।
ভাষা আন্দোলনের সকল লড়াকু সেনানী, আর আত্ম-উৎসর্গকারী সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। "আমরা তোমাদের ভুলবো না"।

১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মিনারটি প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।

বাংলা ভাষাকে পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ সালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয় স্থপতি হামিদুর রহমান, নভেরা আহমেদের তত্ত্বাবধানে
(মূল ডিজাইনে দেয়াল সংলগ্ন ১,৫০০ -স্কয়ার ফুট মুরাল (ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য) ছিল (যা আমি নিজেও দেখেছিলাম)।
১৯৬৩ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ঐ বছর শহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম শহীদ দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে উদ্বোধন করেন।

*****
স্বাধীনতার পর বেশ কয়েকবার শহীদ মিনারের সংস্কার করা হয়েছে। মূল বেদী বড় করা হয়েছে ফলে মুরালগুলো ঢাকা পড়ে গেছে।
আজকের শহীদমিনারের রাস্তা সংলগ্ন যে সীমানা প্রাচীর এক সময় এখানে কাঁটা তারের বেড়া ছিল।
কাঁটাতারের বেড়াকে ছুঁয়ে নর্দমা ( ড্রেন ) প্রবাহিত ছিল যা মিনারের সৌন্দর্যকে অনেকটাই ম্লান করেছিল। রাস্তার ঠিক বিপরীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ এবং
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের সামনেও একই রকম উন্মুক্ত ড্রেন ছিল(যা এখনও আছে।)
যেই রাস্তাটি শহীদ মিনার ঘেঁষে চলে গেছে সেটি সময়ের সাথে সাথে প্রশস্ত হয়েছে।
আজকের প্রজন্ম শহীদের স্মরণে তৈরি করা চমৎকার স্থাপত্য মুরালগুলো শহীদ মিনারের বেদীতে কখনোই দেখতে পাবেনা ভেবে একটু খারাপ লাগছে।
 
একুশ কোনো শোকগাথা নয় পর্ব-১ : ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস
http://saifbhuyan.blogspot.com/2012/02/blog-post_10.html 
 
একুশ কোনো শোকগাথা নয়: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পর্ব-২
http://saifbhuyan.blogspot.com/2012/02/blog-post_12.html

সূত্র ও ছবি:
(১) মিসেস বদরুল আলম
তালুকদার মনিরুজ্জামান, হাসান জহির, ইন্টারনেট

রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

একুশ কোনো শোকগাথা নয় : ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস-২

পূর্ব প্রকাশের পর



উত্তেজনা কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলে ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি পাকিস্তান এসেম্বলির নীতি নির্ধারক কমিটি ঘোষণা করে, ''উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা।''
ঢাকার পল্টন ময়দানের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন একই সুরে বলেন, "Urdu alone will be the state language of Pakistan"
পর পর দুটি ঘোষণা বাঙালির রক্তে আগুন ঢেলে দেয়। ফুঁসে উঠে গোটা দেশ।
২৮শে জানুয়ারি, ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাদেশিক মন্ত্রীদের মিটিঙের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
৩০শে জানুয়ারি, ১৯৫২ আওয়ামী লীগ কম্যুনিস্ট ফ্রন্ট এবং অন্যান্য সংগঠনগুলোর সাথে এক গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সভায় সকলে একমত হয় যে, "শুধু মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনে ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত হবেনা"। সমমনা দলগুলো ছাত্রদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত দেয়। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ব্যাপারে ঐক্যমত্য হয়।

৩১শে জানুয়ারি, ১৯৫২ মাওলানা ভাসানী সভাপতিত্বে সব দলের সমন্বয়ে একটি সভা হয় যেখানে আবুল হাশিম, হামিদুল হক চৌধুরী সহ বিখ্যাত সব নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সর্ব সম্মতিক্রমে অল পার্টি একশন কমিটি (ACPA)গঠিত হয়। আহবায়ক করা হয় কাজী গোলাম মাহবুবকে। মাওলানা ভাসানীকে চেয়ারম্যান করা হয়। আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয় আওয়ামী লীগ, স্টুডেন্ট লীগ, যুব লীগ,খিলাফতে -রাব্বানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠন "ভাষা সংগ্রাম কমিটি অব একশন"।

৩রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ "কমিটি অব একশন" সংখ্যাগরিষ্ঠদের দাবীকে পদদলিত করার প্রতিবাদে সভার আয়োজন করে। মাওলানা ভাসানী ছাড়াও আবুল হাশিম সহ অনেকে বক্তব্য প্রদান করেন। এই সভায় পূর্ব বাংলার এসেম্বলিতে বাজেট ঘোষণার দিন অর্থাৎ ২১শে ফেব্রুয়ারি স্ট্রাইক ঘোষণা করা হয়।
স্ট্রাইক রুখে দিতে ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২১শে ফেব্রুয়ারি সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে স্ট্রাইক পালিত হয়। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এক সভার আয়োজন করে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে প্রাদেশিক এসেম্বলির দিকে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। ছাত্র মিছিল পুলিশ টিয়ার গ্যাস সেল নিক্ষেপ করে, লাঠি চার্জ করে। জবাবে ছাত্ররাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সহ আশেপাশের গোটা এলাকায়।

বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে বিক্ষোভরত ছাত্রদের উপর পুলিশ নির্বিচার গুলিবর্ষণ করলে মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, আব্দুল জব্বার, আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমেদ এবং আব্দুস সালাম সহ ৫ জন ছাত্র শহীদ হয়।
ছাত্র হত্যার ঘটনা ঢাকা সহ সারাদেশে আগুনের হল্কার মত ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত হাজার হাজার জনতা ঢাকা মেডিকাল কলেজ চত্বরে জড় হতে থাকে।

পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শহীদদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে জনতা শোক মিছিলের প্রস্তুতি নিলে পুলিশ আবারও গুলি করে। গুলিতে ৪ জন নিহত হয়। উত্তেজিত জনতা সরকার সমর্থিত একটি পত্রিকা অফিস জালিয়ে দেয়।

উত্তাল জনসমুদ্র নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎকালীন সরকারকে সেনা বাহিনীকে তলব করতে হয়।
পরিস্থিতির চাপে মুখ মন্ত্রী নুরুল আমিন বিধান সভায় বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দানের সুপারিশ করলে সাথে সাথে তা বাতিল হয়ে যায়।
(চলবে)

একুশ কোনো শোকগাথা নয় পর্ব-2: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস

শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

একুশ কোনো শোকগাথা নয় পর্ব-২: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস



ভাষা আন্দোলনের পটভূমি:-

১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে করাচীতে শিক্ষা মন্ত্রী ফজলুর রহমানের আহবানে পাকিস্তান শিক্ষা কনফারেন্সে প্রস্তাব গৃহীত হয়, "উর্দুকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে,
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে উর্দু।"
পূর্ববাংলার মানুষের চেতনা , আশা- আকাঙ্ক্ষা, আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাথে সাংঘর্ষিক এই আইন এসেম্বলিতে পাস করে অফিস আদালত , পোস্ট কার্ড , মানি অর্ডার ফর্ম ইত্যাদিতে ইংলিশ এবং উর্দু বাধ্যতামূলক করার অপরিণামদর্শী এই সিদ্ধান্তই ভাষার দাবীতে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে প্ররোচিত করেছিল।
শিক্ষা কনফারেন্সে আগত একজন বাঙালি প্রতিনিধি উর্দুকে সর্বত্র চাপিয়ে দেয়ার বিরোধিতা করেন।

১৯৪৭ সালে ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সামাজিক, পেশাজীবী, চিন্তাবিদ, লেখক এবং সাংবাদিকদের সমন্বয়ে "তমদ্দুন মজলিস" নামক সংস্হা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রথম প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন নূরুল হক ভূঁইয়া ।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সামসুল আলম, আবুল খয়ের, আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী এবং অলি আহাদ। পরবর্তীতে এই কমিটি সম্প্রসারণ করা হয় এবং মোহাম্মদ তোয়াহা এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম কমিটিতে যোগ দেন।

মজলিসের সচিব আবুল কাশেম তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে সভার আয়োজন করেন। ভাষার দাবী প্রতিষ্ঠায় দলমত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা চান।
এদিন-ই আবুল হাশিমকে চেয়ারম্যান করে খিলাফতে -রব্বানী পার্টির প্রতিষ্ঠা করা হয়।
"তমদ্দুন মজলিস" এর উদ্যোগেই সর্বপ্রথম "রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ" গঠনের প্রস্তাব করা হয়। শুরুর দিকে কমিটির সকল ধরনের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত গোপনে পরিচালনা করা হতো।

১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান এসেম্বলির বিরোধী দলের সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত উর্দু এবং ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তরভুক্ত করার দাবী জানান।
মার্চের শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্র-নেতৃবৃন্দ, বাম, ডান, মধ্যপন্থী সকল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে "একশন কমিটি"/"রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ"গঠিত হয়।

ঐদিনই
ভাষার দাবিতে ১১ই মার্চ সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী প্রদানের ঘোষনা দেয়া হয়। "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" শ্লোগান নিয়ে ছাত্র-মিছিল রাজপথে নামলে পুলিশ ব্যটন চার্জ করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহ ৬৫ জনকে গ্রেফতার করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারান্তরীন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সহ ছাত্রদের গ্রেফতারের খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র চরম ক্ষোভের জন্ম দেয়। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকে।
এদিকে ১৯শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম গভর্নর জেনারেল'র ঢাকা সফরের তারিখ নির্ধারিত ছিল।

ছাত্রদের ফেটে পড়ার ঘটনা নাজিমুদ্দিনের জন্য একদিকে চ্যালেঞ্জ অন্যদিকে স্নায়বিক চাপ হয়ে দেখা দেখা দিলে মোহাম্মদ আলীকে(বগুড়া) প্রতিনিধি করে একশন কমিটির সাথে একটি আলোচনায় বসে। কমিটি দুইটি প্রস্তাব পেশ করে। ১) প্রাদেশিক বিধানসভা পূর্ব-পাকিস্তানের সরকারী ভাষা বাংলা করার প্রস্তাব করবে এবং নির্দেশনার মাধ্যমে তা পূরণ করবে ২)
বিধানসভা সরকারের কাছে সুপারিশ করবে যে বাংলাদেশের নিজস্ব একটি ভাষা থাকবে (-- হাসান জাহির)

২১শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে ঘোষণা দেন, "State language of Pakistan is going to be Urdu and no other language. Anyone who tries to mislead you is really an enemy of Pakistan."
তার এই ঘোষণার সাথে সাথে উপস্থিত ছাত্র জনতা প্রতিবাদে মুখরিত হয়। উপস্থিত ছাত্র জনতার নো, নো ধ্বনিতে চারিদিক প্রকম্পিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সারাদেশের মানুষের কাছে ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন, কিন্তু সমস্ত আলোচনা-ই ভেস্তে যায়।

ভাষা আন্দোলনের দাবী ক্রমশ উপেক্ষিত হতে থাকে। আমাদের গৌরব গাঁথা লেখার জন্য আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে হয়। (চলবে)

তথ্য ও ছবি: হাসান জহির, তালুকদার মনিরুজ্জামান, ইন্টারনেট

একুশ কোনো শোকগাথা নয় পর্ব-১