জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১২

প্রাক-বাজেট আলোচনা: প্রত্যাশা- ১


আর কিছুদিনের মধ্যে দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ গন জাতীয় বাজেট প্রণয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয় জাতীয় সংসদে তাঁর বাজেট পেশ করবেন।
জাতীয় বাজেট নিয়ে সচেতন মানুষ, ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদ আর বুদ্ধিজীবীদের আগ্রহের শেষ নেই।
সাধারনতঃ বাজেটগুলোর চেহারা যেমন হয়ে থাকে:
নির্বাচনের সময় বা আগে সাধারণ মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো ভুলে গিয়ে বাজেট প্রণীত হয়।
জাতীয় বাজেটে হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে।
প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে বলে ঘোষণা আসবে। অনেক আশার কথা বলা হবে।
বিদেশী অর্থ সাহায্য প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক উন্নয়ন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
নতুন নতুন কর আরোপ করা হবে।
''আমাদের কাছে আলাদীনের চেরাগ নেই''..প্রধানমন্ত্রী(তাই বাজেটে নতুন কোন চমক থাকবেনা)।
বাজেটে যত রঙিন ফানুস উড়ানো হয়, তার কোনকিছু বাস্তবে অর্জিত হয় বলে আমার জানা নেই।
বাজেটে আর যাই থাকুক গরিবের জন্য, দারিদ্রসীমার নীচে যারা বসবাস করছে তাঁদের জন্য কিছু থাকবেনা বলেই আমার ধারণা।
কৃষিক্ষেত্রে বীজ, সার ও কীটনাশকের ওপর শতকরা ১০০ ভাগ ভর্তুকি চাই। বোরো মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ভর্তুকি এবং বিতরণ নিয়ে যে সমালোচনা চলছে এবং সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে সেই বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের অভাবে
দেশে উৎপাদন এবং বিনিয়োগের যে বেহাল দশা তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় এটা মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
বাজেটে কি থাকছে, না থাকছে তা নিয়ে নয়; আজ বরং আসন্ন বাজেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শিক্ষাকে পৃথিবীর সকল দেশ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
আমাদের দেশেও শিক্ষা খাতে বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ থাকে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
শিক্ষার প্রসারে এবং আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে যে সকল বিষয় অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি, সেগুলো হলো
১) কারিগরি শিক্ষার প্রসার (কম্পিউটার, যন্ত্র, বিদ্যুৎ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, হস্তশিল্প, কাঠের কাজ, অটোমোবাইল ইত্যাদি সহ সকল কারিগরি শিক্ষা)
কে গুরুত্ব দিয়ে দেশের সর্বত্র কারিগরি শিক্ষালয় খোলার জন্য সরকারী অনুদান রাখা হোক।
২) জনসংখ্যার ঘনত্ব হিসেবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারী বিদ্যাপীঠ গড়ে তোলার জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করা হোক।
৩) বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারী ও বেসরকারি শিক্ষালয়ে ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণ ও কারিগরি শিক্ষায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হোক।
৪) সকল শিক্ষা উপকরণ, বিশেষত: বই, খাতা, কাগজ (সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট), কলম, পেন্সিল, স্কুল ব্যাগ ইত্যাদির ওপর আমদানি শুল্ক ও মুসক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হোক।
সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট কাগজের উৎপাদন বাড়াতে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের কাগজ কলগুলোকে সরকারী অর্থায়নে পুনরায় চালু করা হোক।
মুদ্রণ শিল্প এবং সংবাদপত্র শিল্পগুলো যেহেতু শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা রাখে, সেহেতু প্রকাশনা শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল যেমন রং ও কেমিক্যাল,
মুদ্রণ যন্ত্র, সাদা এবং নিউজপ্রিন্ট কাগজ ইত্যাদি আমদানির ক্ষেত্রে সকল কর ও মুসক প্রত্যাহার করা হোক।
৫) সকল আবাসিক স্কুল কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসন ব্যবস্থার মান উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হোক।
এছাড়া সকল আবাসিক শিক্ষালয়ের ক্যান্টিনে অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও সরবরাহ বন্ধে এবং স্বাস্থ্যকর, মানসম্পন্ন ও পুষ্টিকর খাবার যোগানে সরকারী অনুদান দেয়া হোক।
শিক্ষার প্রসারই পারে আমাদের মত একটি উন্নয়নশীল জাতিকে স্বাবলম্বী করতে।
সময়ের প্রয়োজনে সকল উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই শিকার করছেন।
আমাদের দেশে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের সন্তানদের মানসম্পন্ন লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পারার কারণে অনেক প্রতিভা বিকশিত হবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠবে, দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে। এই দক্ষ জনশক্তি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে প্রেরণ করলে প্রচুর
প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। (চলবে)

শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার……….আমরা জেগে আছি

সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার……….আমরা জেগে আছি


মহান ভাষা আন্দোলনে আত্ম-উৎসর্গকারী সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে
একুশের প্রভাত ফেরি লাখো কণ্ঠের মৌন মিছিলে এগিয়ে চলে! ফুলে ফুলে সুশোভিত বাঙালির চেতনার মিনার, শহীদ মিনার।
****
১৯৫২ থেকে ২০১২, পথ পরিক্রমায় ৬০ বছরে পদার্পণ করেছি আমরা।
এই ৬০ বছরে আমাদের অর্জন, গোটা বিশ্বের দরবারে আমরা সমাসীন হয়েছি আত্ম-মর্যাদাবান এক জাতি হিসেবে।
একাত্তরের অগ্নি-ঝরা মার্চে গর্জে উঠা কণ্ঠস্বর, নির্বিচার গণহত্যা, প্রতিরোধ, গেরিলা যুদ্ধ, বিচ্ছু বাহিনীর মরন- পণ লড়াই---
****
ম হা ন স্বা ধী ন তা। আমার মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বেদনায় জাতীয় প্রাপ্তি ম্রিয়মাণ ছিল স্বাধীনতা লাভের ৪০ বছর পর্যন্ত।

****
১৯৪৮-১৯৫২ সালে ভাষার দাবীটি জোরালো হওয়ার পিছনে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বীর বাঙালির গর্জে উঠার পেছনের ইতিহাস আমরা সবাই জেনেছি।
সেদিন অত্যন্ত সুকৌশলে আমাদের ভিতর সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয়েছিল! পশ্চিম পাকিস্তান বাংলা ভাষাকে হিন্দুদের ভাষা এবং উর্দুই মুসলমানদের ভাষা হওয়া উচিত বলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করতে চেয়েছিল।

মহান ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা ছিল অধিকার আদায়ের, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বীর বাঙালির ঝলসে উঠা।

****
এবারের আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস নানা কারণে অত্যন্ত মহিমান্বিত। ১৯৭১-এর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি এতদিন তা একেবারেই নিষ্প্রভ ছিল। এই সুদীর্ঘ সময়ে আমরা ঘাতক-দালাল, ধর্ষক-খুনি, মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে ব্যর্থ ছিলাম।

ধর্মকে পুঁজি করে যারা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বে-পথু করছে যারা ধর্মের অপ-ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের গা বাচাতে এর-ওর কাঁধে ভর করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে, যাদের হৃদয় সাম্প্রদায়িকতার বিষ-বাষ্পে ভরা, যারা নিজেদের প্রয়োজনে ফতোয়া দেয়, স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙ্গতে যায়---

তাদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠা আজকের প্রজন্ম এসো মহান একুশের প্রারম্ভে আজকে আবার নতুন করে শপথ করি,
"আমার মা ,আমার বোন, আমার ভাইয়ের হত্যাকারী, মানবতা বিরোধী অপরাধী আমরা তোমাদের রুখে দেব।"

আমাদের বর্ণমালা, আমাদের লাল সবুজ, এই দেশ তোমার আমার সকলের।
আত্ম মর্যাদা-শীল এক জাতির সন্তান হিসাবে আমরা গর্বিত। ৭১-এর মানবতা-বিরোধী অপরাধীদের বিচারেই আমরা প্রশস্তি পাব।

মহান ভাষা আন্দোলনে সকল লড়াকু সেনানী, আত্ম-উৎসর্গকারী সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ধন্যবাদ।

ছবি: ইন্টারনেট

রায়ঠাকুরানী অমর হবে




মেঘ খণ্ড। আকাশের চুড়োয় মেঘের মিনার।
শরতের আকাশ! ধবল পরী!
শূন্যে ঝুলে থাকা দুরন্ত ঈগল
এক মেঘ বালিকা, এক রাজকন্যা।

পাখিটা দিনভর নখরে, কামড়ে ক্ষতবিক্ষত
করে। স্বপ্ন? মুখ থুবড়ে পড়ে ভিন গ্রহে
পাশবিক চিৎকারে, শীৎকারে রক্ত ঝরায়
মেঘ তখনও ঝরে না। বিদ্যুৎ ঝলকায়।

পাখিটা কখনো তার ছিলনা। পাঁজরের হাড়
খুবলে খে'তো। ঔদ্ধত্যের কাছে আমরণ বশ্যতা।
তবু দিন শেষে পাখিটা নীড়ে ফিরে আসুক
তার ঘর, খড়-কুটো-মেঝ ভিজে যাক।

অনেক পরে বরফের বুকে মেঘ ঝরে।
বোবা কান্নায় বুকের ভেতর কঠিন শপথ
"যত কাল বাঁচি নিজেই হব পাখি
শিকারি। ঘর ছাড়া করে তবেই ক্ষান্ত।

বানর হবি? আমাজন যাবি!
পিগমিদের ঘর? আদিম বসতি?
কি চাস তুই! "মেঘ ভালো লাগেনা"
"মেঘ ভালবাসি না''। "ভালবাসতে জানিনা।"

তবু অরণ্যে পাতায় পাতায় ঘর্ষণে
দাবানল। গভীর অরণ্য, আদিম গুহা, সতেজ-সবুজ ঘাস।
উর্বর জমিন চাষ করে সুতীক্ষ্ণ লাঙ্গলের ফলা।
স্বপ্ন দেখায়। সাতরঙা রংধনু পাহাড়ের পাদদেশ।

মেঘ খণ্ড আকাশ ছুঁতে চায়। রায়ঠাকুরানী
অমর হবে। দাবানলের পোড়া জমিনে সারাক্ষণ
বারি বিন্দু হতে চায়। বজ্রপাতের সাথে সংযোগ
পেতে নতুন ফাঁদ পাতে। সারাক্ষণ বর্ষে।

সংযোগ কেটে যায় বৈদ্যিক ব্যথায়
অবকাশ নেই আকাশের নিচে ঝুলে থাকে ঠায়
প্রতিশোধের আগুনে ঝাপ দিতে
দিগন্তে পাখা মেলে। কুল কুল ঝরে অবিরাম।

তোমার বর্ষণে গজানো সতেজ-শস্য খেত
মাড়িয়ে গেছে বুনো-শূয়র, হায়েনার দল!
ঘন পাঁকে রাজহাঁসের গায়ে কাদা আটকে থাকে ?
ভুল পথে পা বাড়ালে নির্মম বজ্রপাতে মূর্তিমান--

বেচে থাকবে শুধু কবিতার 'খেরো খাতাতে'।

শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

২৭ জন নির্বাচিত ব্লগারের লেখা “নগর নাব্য” একুশে বই মেলায় এসেছে।


২৭ জন নির্বাচিত ব্লগারের লেখা “নগর নাব্য” একুশে বই মেলায় এসেছে।


২৭ জন নির্বাচিত ব্লগারদের লেখা নিয়ে ব্লগ সংকলন “নগর নাব্য” একুশে বই মেলায় এসেছে।
বইটির প্রকাশক : শ্রাবন প্রকাশনী,
পাওয়া যাবে স্টল নং ১০৭-১০৮ এ ।

এতে লিখেছেন:-

১.বিভুতি ভুষন মিত্র
২.সাইফ ভুঁইয়া
৩.মাহফুজুর রহমান মানিক
৪.মোত্তালিব দরবারি
৫.আলী আহসান হাবিব
৬.মাতরিয়শকা ফিইচারিষ্ট
৮.ম.সাহিদ
৯.রাগ ইমন
১০.আব্দুল মোনেম
১১আইরিন সুলতানা
১২.প্রামানিক জালাল উদ্দিন
১৩.সগীর হোসাইন খান
১৪রাইসুল ইসলাম সৌরভ
১৫.ফকির ইলিয়াস
১৬.আশিকুর-নুর
১৭.কৌশিক আহমেদ
১৮.বাসন্ত বিষ্ণুব
১৯.হাবিবুর রহমান তারেক
২০.নুরুন্নাহার শিরিন
২১.মামুন ম.আজিজ
২২.নাজনীন খলিল
২৩.নাহুয়াল মিথ
২৪.তৌহিদ উল্লাহ শাকিল
২৫.জহিরুল চৌধুরী
২৬.রিতা রায় মিঠু
২৭.সারওয়ার চৌধুরী

সহমত ব্লগার বৃন্দ,বই প্রিয় বন্ধুদের জন্য আমার শুভেচছা থাকল। আশাকরি বইটি পাঠক প্রিয়তা পাবে।

তথ্য: ম, সাহিদ, আইরিন সুলতানা

বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস: শেষ পর্ব



পরদিন অর্থাৎ ২২শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ রাতের অন্ধকারে নির্মিত হলো দেশের প্রথম শহীদ মিনার।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের তৎকালীন ভিপি মাওলার উদ্যোগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র বদরুল আলম ভিক্টোরিয়া পার্কে সিপাহী বিদ্রোহের স্মৃতিস্তম্ভের আদলে প্রথম শহীদ মিনারের নকশা করেন।

৫ফুট উঁচু ও ৬ ফুট প্রস্থ স্তম্ভ প্রথম শহীদ মিনারটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের মির্জা মাজহারুল ইসলামের ঘরে বানানো হয়। (১)
ঐ রাতেই শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিক ভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।
স্তম্ভে বদরুল আলমের আঁকা দুটি পোস্টার ছিল যাতে লেখা ছিল":- "স্মৃতিস্তম্ভ" এবং "রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।"

পুরনো ঢাকার পঞ্চায়েত কমিটির পিয়ারু সর্দার ইট, বালু ও সিমেন্ট দিলে বর্তমান শহীদ মিনারের স্থানে
১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়া স্তম্ভটি হোস্টেলের ছাত্ররা নির্মাণ শ্রমিকদের সহায়তায় শহীদ মিনারটি তৈরি করে। (উইকিপিডিয়া)

২৩শে ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক আবুল মনসুর নামকরণ করেন ‍‍‍‍‍‍‍‍‍'শহীদ মিনার'। নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করার প্রতিবাদে এইদিন দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয়।
ঐদিন-ই APCA ২৫ই ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের ডাক দেয় ।

২৪শে ফেব্রুয়ারি আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম সামসুদ্দিন 'শহীদ মিনার' আবারও উদ্বোধন করেন।

হরতালের পরদিন ২৬শে ফেব্রুয়ারি পুলিশ বুল-ডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দেয় ভাষা শহীদ স্মরণে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার।

ভাষা আন্দোলন ক্রমশ: রূপ নিলো স্বাধিকারের আন্দোলনে।

এরই মধ্যে রচিত হয়ে গেছে একুশের কালজয়ী গান, "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি"।
এটি প্রথমে কবিতা আকারে লিখেন আব্দুল গাফফার চৌধুরী। কবিতাটি ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে প্রথম প্রকাশিত হয়।
তৎকালীন সরকার সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করে। পরবর্তীতে কবিতাটিই কালজয়ী গানে পরিণত হয়। গানটিতে প্রথম সুরারোপ করেছিলেন আব্দুল লতিফ।
পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদ গানটিতে সুরারোপ করেন।

*****
১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার উপলব্ধি করতে পারলো বাঙালি জাতিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই বছরের ৭ই মে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে এসেম্বলিতে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মত পাকিস্তান সরকারের ইতিবাচক/পরোক্ষ মনোভাবের মধ্য দিয়ে সারাদেশব্যপী শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
২৬শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়ে বিধান সভায় আইন গৃহীত হয়।
২৩শে মার্চ, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানের পরিবর্তন করা হয়।

সুদীর্ঘ আন্দোলন, বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতির প্রাণের দাবী প্রতিষ্ঠিত হলো।
ভাষা আন্দোলনের সকল লড়াকু সেনানী, আর আত্ম-উৎসর্গকারী সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। "আমরা তোমাদের ভুলবো না"।

১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মিনারটি প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।

বাংলা ভাষাকে পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ সালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয় স্থপতি হামিদুর রহমান, নভেরা আহমেদের তত্ত্বাবধানে
(মূল ডিজাইনে দেয়াল সংলগ্ন ১,৫০০ -স্কয়ার ফুট মুরাল (ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য) ছিল (যা আমি নিজেও দেখেছিলাম)।
১৯৬৩ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ঐ বছর শহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম শহীদ দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে উদ্বোধন করেন।

*****
স্বাধীনতার পর বেশ কয়েকবার শহীদ মিনারের সংস্কার করা হয়েছে। মূল বেদী বড় করা হয়েছে ফলে মুরালগুলো ঢাকা পড়ে গেছে।
আজকের শহীদমিনারের রাস্তা সংলগ্ন যে সীমানা প্রাচীর এক সময় এখানে কাঁটা তারের বেড়া ছিল।
কাঁটাতারের বেড়াকে ছুঁয়ে নর্দমা ( ড্রেন ) প্রবাহিত ছিল যা মিনারের সৌন্দর্যকে অনেকটাই ম্লান করেছিল। রাস্তার ঠিক বিপরীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ এবং
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের সামনেও একই রকম উন্মুক্ত ড্রেন ছিল(যা এখনও আছে।)
যেই রাস্তাটি শহীদ মিনার ঘেঁষে চলে গেছে সেটি সময়ের সাথে সাথে প্রশস্ত হয়েছে।
আজকের প্রজন্ম শহীদের স্মরণে তৈরি করা চমৎকার স্থাপত্য মুরালগুলো শহীদ মিনারের বেদীতে কখনোই দেখতে পাবেনা ভেবে একটু খারাপ লাগছে।
 
একুশ কোনো শোকগাথা নয় পর্ব-১ : ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস
http://saifbhuyan.blogspot.com/2012/02/blog-post_10.html 
 
একুশ কোনো শোকগাথা নয়: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পর্ব-২
http://saifbhuyan.blogspot.com/2012/02/blog-post_12.html

সূত্র ও ছবি:
(১) মিসেস বদরুল আলম
তালুকদার মনিরুজ্জামান, হাসান জহির, ইন্টারনেট

রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

একুশ কোনো শোকগাথা নয় : ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস-২

পূর্ব প্রকাশের পর



উত্তেজনা কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলে ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি পাকিস্তান এসেম্বলির নীতি নির্ধারক কমিটি ঘোষণা করে, ''উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা।''
ঢাকার পল্টন ময়দানের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন একই সুরে বলেন, "Urdu alone will be the state language of Pakistan"
পর পর দুটি ঘোষণা বাঙালির রক্তে আগুন ঢেলে দেয়। ফুঁসে উঠে গোটা দেশ।
২৮শে জানুয়ারি, ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাদেশিক মন্ত্রীদের মিটিঙের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
৩০শে জানুয়ারি, ১৯৫২ আওয়ামী লীগ কম্যুনিস্ট ফ্রন্ট এবং অন্যান্য সংগঠনগুলোর সাথে এক গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সভায় সকলে একমত হয় যে, "শুধু মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনে ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত হবেনা"। সমমনা দলগুলো ছাত্রদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত দেয়। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ব্যাপারে ঐক্যমত্য হয়।

৩১শে জানুয়ারি, ১৯৫২ মাওলানা ভাসানী সভাপতিত্বে সব দলের সমন্বয়ে একটি সভা হয় যেখানে আবুল হাশিম, হামিদুল হক চৌধুরী সহ বিখ্যাত সব নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সর্ব সম্মতিক্রমে অল পার্টি একশন কমিটি (ACPA)গঠিত হয়। আহবায়ক করা হয় কাজী গোলাম মাহবুবকে। মাওলানা ভাসানীকে চেয়ারম্যান করা হয়। আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয় আওয়ামী লীগ, স্টুডেন্ট লীগ, যুব লীগ,খিলাফতে -রাব্বানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠন "ভাষা সংগ্রাম কমিটি অব একশন"।

৩রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ "কমিটি অব একশন" সংখ্যাগরিষ্ঠদের দাবীকে পদদলিত করার প্রতিবাদে সভার আয়োজন করে। মাওলানা ভাসানী ছাড়াও আবুল হাশিম সহ অনেকে বক্তব্য প্রদান করেন। এই সভায় পূর্ব বাংলার এসেম্বলিতে বাজেট ঘোষণার দিন অর্থাৎ ২১শে ফেব্রুয়ারি স্ট্রাইক ঘোষণা করা হয়।
স্ট্রাইক রুখে দিতে ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২১শে ফেব্রুয়ারি সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে স্ট্রাইক পালিত হয়। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এক সভার আয়োজন করে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে প্রাদেশিক এসেম্বলির দিকে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। ছাত্র মিছিল পুলিশ টিয়ার গ্যাস সেল নিক্ষেপ করে, লাঠি চার্জ করে। জবাবে ছাত্ররাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সহ আশেপাশের গোটা এলাকায়।

বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে বিক্ষোভরত ছাত্রদের উপর পুলিশ নির্বিচার গুলিবর্ষণ করলে মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, আব্দুল জব্বার, আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমেদ এবং আব্দুস সালাম সহ ৫ জন ছাত্র শহীদ হয়।
ছাত্র হত্যার ঘটনা ঢাকা সহ সারাদেশে আগুনের হল্কার মত ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত হাজার হাজার জনতা ঢাকা মেডিকাল কলেজ চত্বরে জড় হতে থাকে।

পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শহীদদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে জনতা শোক মিছিলের প্রস্তুতি নিলে পুলিশ আবারও গুলি করে। গুলিতে ৪ জন নিহত হয়। উত্তেজিত জনতা সরকার সমর্থিত একটি পত্রিকা অফিস জালিয়ে দেয়।

উত্তাল জনসমুদ্র নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎকালীন সরকারকে সেনা বাহিনীকে তলব করতে হয়।
পরিস্থিতির চাপে মুখ মন্ত্রী নুরুল আমিন বিধান সভায় বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দানের সুপারিশ করলে সাথে সাথে তা বাতিল হয়ে যায়।
(চলবে)

একুশ কোনো শোকগাথা নয় পর্ব-2: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস

শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

একুশ কোনো শোকগাথা নয় পর্ব-২: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস



ভাষা আন্দোলনের পটভূমি:-

১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে করাচীতে শিক্ষা মন্ত্রী ফজলুর রহমানের আহবানে পাকিস্তান শিক্ষা কনফারেন্সে প্রস্তাব গৃহীত হয়, "উর্দুকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে,
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে উর্দু।"
পূর্ববাংলার মানুষের চেতনা , আশা- আকাঙ্ক্ষা, আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাথে সাংঘর্ষিক এই আইন এসেম্বলিতে পাস করে অফিস আদালত , পোস্ট কার্ড , মানি অর্ডার ফর্ম ইত্যাদিতে ইংলিশ এবং উর্দু বাধ্যতামূলক করার অপরিণামদর্শী এই সিদ্ধান্তই ভাষার দাবীতে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে প্ররোচিত করেছিল।
শিক্ষা কনফারেন্সে আগত একজন বাঙালি প্রতিনিধি উর্দুকে সর্বত্র চাপিয়ে দেয়ার বিরোধিতা করেন।

১৯৪৭ সালে ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সামাজিক, পেশাজীবী, চিন্তাবিদ, লেখক এবং সাংবাদিকদের সমন্বয়ে "তমদ্দুন মজলিস" নামক সংস্হা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রথম প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন নূরুল হক ভূঁইয়া ।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সামসুল আলম, আবুল খয়ের, আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী এবং অলি আহাদ। পরবর্তীতে এই কমিটি সম্প্রসারণ করা হয় এবং মোহাম্মদ তোয়াহা এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম কমিটিতে যোগ দেন।

মজলিসের সচিব আবুল কাশেম তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে সভার আয়োজন করেন। ভাষার দাবী প্রতিষ্ঠায় দলমত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা চান।
এদিন-ই আবুল হাশিমকে চেয়ারম্যান করে খিলাফতে -রব্বানী পার্টির প্রতিষ্ঠা করা হয়।
"তমদ্দুন মজলিস" এর উদ্যোগেই সর্বপ্রথম "রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ" গঠনের প্রস্তাব করা হয়। শুরুর দিকে কমিটির সকল ধরনের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত গোপনে পরিচালনা করা হতো।

১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান এসেম্বলির বিরোধী দলের সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত উর্দু এবং ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তরভুক্ত করার দাবী জানান।
মার্চের শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্র-নেতৃবৃন্দ, বাম, ডান, মধ্যপন্থী সকল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে "একশন কমিটি"/"রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ"গঠিত হয়।

ঐদিনই
ভাষার দাবিতে ১১ই মার্চ সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচী প্রদানের ঘোষনা দেয়া হয়। "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" শ্লোগান নিয়ে ছাত্র-মিছিল রাজপথে নামলে পুলিশ ব্যটন চার্জ করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহ ৬৫ জনকে গ্রেফতার করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারান্তরীন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু সহ ছাত্রদের গ্রেফতারের খবর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র চরম ক্ষোভের জন্ম দেয়। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকে।
এদিকে ১৯শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম গভর্নর জেনারেল'র ঢাকা সফরের তারিখ নির্ধারিত ছিল।

ছাত্রদের ফেটে পড়ার ঘটনা নাজিমুদ্দিনের জন্য একদিকে চ্যালেঞ্জ অন্যদিকে স্নায়বিক চাপ হয়ে দেখা দেখা দিলে মোহাম্মদ আলীকে(বগুড়া) প্রতিনিধি করে একশন কমিটির সাথে একটি আলোচনায় বসে। কমিটি দুইটি প্রস্তাব পেশ করে। ১) প্রাদেশিক বিধানসভা পূর্ব-পাকিস্তানের সরকারী ভাষা বাংলা করার প্রস্তাব করবে এবং নির্দেশনার মাধ্যমে তা পূরণ করবে ২)
বিধানসভা সরকারের কাছে সুপারিশ করবে যে বাংলাদেশের নিজস্ব একটি ভাষা থাকবে (-- হাসান জাহির)

২১শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে ঘোষণা দেন, "State language of Pakistan is going to be Urdu and no other language. Anyone who tries to mislead you is really an enemy of Pakistan."
তার এই ঘোষণার সাথে সাথে উপস্থিত ছাত্র জনতা প্রতিবাদে মুখরিত হয়। উপস্থিত ছাত্র জনতার নো, নো ধ্বনিতে চারিদিক প্রকম্পিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সারাদেশের মানুষের কাছে ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন, কিন্তু সমস্ত আলোচনা-ই ভেস্তে যায়।

ভাষা আন্দোলনের দাবী ক্রমশ উপেক্ষিত হতে থাকে। আমাদের গৌরব গাঁথা লেখার জন্য আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে হয়। (চলবে)

তথ্য ও ছবি: হাসান জহির, তালুকদার মনিরুজ্জামান, ইন্টারনেট

একুশ কোনো শোকগাথা নয় পর্ব-১

বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বর্ণমালার কবিতা




ফুল, প্রভাত ফেরি
শান্ত-সমাহিত সারি সারি
কবরের পাশে হেটে যেতে
তোমার বুকে শিহরণ জাগে!

লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত তুমি নও
আমি জানি আধারের বুক চিরে
নতুন সূর্য ।সেতো অধিকারের।
চেতনায়, সংগ্রামে. শানিত বীর্যে।

মায়ের কথা মনে পড়ছে, না?
মা, চেয়ে দেখো কালো ব্যাজে-পতাকায়
লাখো মানুষের ঢল! কই এখানে তো
বিভেদ নেই, ধ্বংসের কথা নেই!

তুমি, তোমরা লাখো মানুষের ভিড়ে
অতি সাধারণ! ভুলে গেছ?
ঠিক আমারই মতন? এখনো জাগো
কাছে এস, কাঁধে রাখো হাত।

তোমরা কি বিস্মৃত! দেখনি আমরা
কেমনে বারবার জন্ম নিয়েছি
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার
রাজপথে, হায়েনার ছোবলে মরেছি বারবার!

আজো হায়েনার ধারালো নখর অস্থির
চারিদিক। কতবার ভাঙ্গবে তোমরা
আমার মনের মিনার?
বুকে ধারণ করেছি বর্ণমালা, মুড়েছি লাল-সবুজে।

এক এক করে খুঁজে নেব প্রথম সুযোগে।

পুনশ্চ: কবিতাটি পড়ে বড় ভাই কবি রেজা রহমান জানতে চাইলেন, হায়েনা শব্দটি সামান্য হয়ে যায়।
(ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় , হায়েনা নিষ্ঠুরতার খুব ভালো প্রতীক না । আসলে কোন বন্যপ্রাণীই মানুষের মতন এত বেশি নিষ্ঠুর হতেই পারেনা । তাছাড়া স্যাডিস্ট হয় মানুষই । কোন বন্যপ্রাণীর মধ্যে আজ অব্ধি স্যাডিজম আবিষ্কার করতে পারেনি বিজ্ঞান । পাশবিক বলে কাউকে গাল দেয়া বা অভিযুক্ত করা তো পুরোপুরি অর্থহীন আর হাস্যকর-----------)

৭১ এর দেশ বিরোধী অপ-শক্তি, ধর্মান্ধ, উগ্রবাদী এবং অসাম্প্রদায়িকদের আমরা হায়েনা নামক "প্রতীকী" শব্দে ডাকি। রেজা ভাইয়ের কথাগুলো আমায় ভাবনায় ফেলে দিয়েছে।

ছবি: ইন্টারনেট

বর্ণমালার কবিতা

বর্ণমালার কবিতা: বর্ণমালার কবিতা

সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

একুশ কোনো শোকগাথা নয়। পর্ব-১


****
আমি প্রথম যখন কথা বলতে শিখেছি তখন নাকি "মা" শব্দটি সর্বপ্রথম উচ্চারণ করেছিলাম! বিজাতীয় ভাষা আমাদের উপর চাপিয়ে দিলে কেমন হত!!
ভাষা আন্দোলনের সকল লড়াকু সেনানী, আর আত্ম-উৎসর্গকারী সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। "আমরা তোমাদের ভুলবো না"।

****
একুশ আমার অহংকার! একুশ আমাদের দৃপ্ত চেতনা, স্বাধিকার, প্রতিরোধে ছিনিয়ে আনা এক গৌরব গাঁথার নাম। ৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনে
আত্ম-উৎসর্গকারীরা বিশ্বের দরবারে আমাদের পরিচিত করেছে আত্ম-মর্যাদাবান, লড়াকু এক জাতি রূপে।
২১শে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস, ভাষার জন্য আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও নেই!

****
শহীদের আত্মত্যাগকে মর্যাদাবান করতে গোটা বাঙালি জাতি অকৃপণ, উদার ভাবে তাঁদের ভালবাসা ঢেলে দিয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে।
একুশের চেতনায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম উজ্জীবিত হয়েছে।
ভাষার মাস এলে সাজ সাজ রব চারিদিকে। প্রাণের মিনার সাজে অপরূপ সাজে।
বর্ণিল দেয়াল লিখন, কালজয়ী কৃতি সন্তানদের অমর বাণী থেকে নির্বাচিত কথামালা বুকের স্পন্দন বাড়িয়ে দেয়।
চারুকলার ছাত্র-ছাত্রীরা গোটা মাস ধরে দেয়ালে দেয়ালে তুলির আঁচড়ে ছড়িয়ে দেয় আমাদের অনুচ্চারিত শ্লোগান।

অন্যদিকে একুশের ঐতিহ্যে লালিত বাংলা একাডেমী সাজে নতুন সাজে। শুরু হয় বাঙালীর প্রাণের মেলা। বই মেলা। একাডেমী চত্বরে গোটা মাস জুড়ে বটমূলে চলে অনুষ্ঠান মালা।
মেলায় আগত সারি সারি দর্শক মন্ত্রমুগ্ধের মত বসে থাকে ঠিক যেন কাঠের পুতুল।
মেলার অনেক আগে থেকেই লেখক-প্রকাশক ব্যস্ত; ভালো মানের লেখা চাই, ভালো মানের প্রচ্ছদ চাই, ভালো পরিবেশক চাই, শত ব্যস্ততার মাঝে ছুটে চলে লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার,আরামবাগ, আজিমপুর, নীলক্ষেতের প্রেসগুলোতে। কি-বোর্ডে ঝড় উঠে। নতুন লেখক বেশ রোমাঞ্চিত! ছাপার হরফে নিজের নাম! নাওয়া-খাওয়া নেই, চলে প্রুফ দেখা।
নতুন মলাটের ছবি চাই। ফ্লাশ জ্বলে উঠে! মলাট বুকে চেপে ধরে, ঠিক যেন সদ্য জন্ম নেয়া নতুন শিশু। অপেক্ষা ভালো লাগেনা।
ফোন বাজে ঘন ঘন। সদ্য বাঁধানো বই। এখনো ভেজা। ছুটে চলে স্টলে স্টলে। আবারও ফোন বাজে ঘন ঘন।

সবাই হাজির বই মেলায়। ছোট ছোট দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে আড্ডার ঝড় তুলে। নবীন, প্রবীণে আজ কোন প্রতিযোগিতা নেই, আজ কোনও বিদ্বেষ নেই,
সকলে পরিশ্রান্ত তবু ক্লান্তি বোধ নেই।
অটোগ্রাফ শিকারি, ফ্লাশ লাইটের আলোয় ঝলসে যায় মেলায় আগত কিশোর-কিশোরীর মুখ!
দুই-বাংলার বিখ্যাত লেখকদের কার কার বই এলো চোখে মুখে প্রশ্ন নিয়ে ঘুরে মেলা ময়। ধুলায় ধুসর। নিরাপত্তা তল্লাশি....। বাহ!

****
একুশ তুমি আমার অহংকার।।

একুশের প্রথম প্রহরকে ঘিরে হাইকোর্ট চত্বর, শাহবাগে বসে ফুলের মেলা। সারারাত জেগে ফুলের ডালা সাজানো, কত বাগানের গাঁদা, ডালিয়া, গোলাপ ফুল উজাড় হয়ে যায় নিমিষেই!
মালীর মুখ অমলিন! "পাগল ছেলের দল"! মনে মনে বলে, নিয়ে যাও সব, বর্ণে-বর্ণে রঙিন হোক গোটা শহীদ মিনার"।

রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে স্কুল-কলেজ গুলোতে জড়ো হয় রাত জাগা এক-ঝাঁক তরুণ-তরুণী, প্রভাত ফেরিতে যাব, প্রভাত ফেরিতে!
প্রভাত ফেরির নিরাপত্তার কারণে ঢাকার অনেক রাস্তাই বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে নিউমার্কেট হয়ে আজিমপুর গোরস্থানে।
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার শুয়ে আছে পরম শান্তিতে। ছোট, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী এই প্রথম শহীদের কবরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বড়দের সাথে !
নগ্ন পা। হাতে ফুলের তোড়া। ইতিহাসের পাতায় দেখা ছবিগুলো কাঁপা-কাঁপা চোখের সামনে ভেসে উঠে " রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই"!
শিশুটি এখন আর শিশু নেই। তার বুকে শানিত প্রতিজ্ঞা, ইস্পাত কঠিন! এদেশ আমার!

নগ্ন পায়ের লাইন এগিয়ে চলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীগুলো সাদা শাড়িতে একেকটি অপ্সরা যেন ! বুকে কালো-ব্যাজ, মলিন মুখ !
মুখে গান "আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি..আমি কি ভুলিতে পারি.."
বুকের ভেতর চেতনায় শানিত দৃপ্ত অঙ্গীকার। এদেশ আমার!

মিছিল এগিয়ে চলে মন্থর গতিতে। সামনেই শহীদ মিনার! পাঞ্জাবি-পাজামায় ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী সব শ্রেণী পেশার মানুষ অবাক তাকিয়ে দেখে 'শহীদ মিনার ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে'!
তারা রাজপথে! বুকে সুদৃঢ় অঙ্গীকার। রক্ত দিয়ে বর্নমালা, স্বাধীনতা এনেছি। রক্ত দিয়ে রুখে দিব দেশ-বিরোধী সকল অপ-শক্তি।

আজকের রাজপথ ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চের ভাষার দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহ ৬৫ জনের গ্রেফতার, আমতলায় গাজীউল হক সহ সকল ভাষা সৈনিকের গর্জন
---১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বন্দুকের গুলিতে লুটিয়ে পড়া লাশের সারি.. নীরব নিথর। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের রক্তে রঞ্জিত রাজপথের মত সাদা কালো মনে হয়!
(চলবে)

একটি আবেদন: বেশি বেশি বই কিনুন। বিশেষ করে নতুনদের, সহমত ব্লগারদের বই। প্রিয়জনদের বই উপহার দিন। আপনি-ই পারেন একটি সৃজনশীল, একটি সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে।

একুশ কোনো শোকগাথা নয়। পর্ব-১

একুশ কোনো শোকগাথা নয়। পর্ব-১: একুশ কোনো শোকগাথা নয়। পর্ব-১

মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১২

রশীদ তালুকদার: ছবিতে যখন বারুদ ছড়াতো

রশীদ তালুকদার: ছবিতে যখন বারুদ ছড়াতো



৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক চক্রের রক্ত চক্ষু ফাঁকি দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত।
রাজপথে আন্দোলনরতদের ছবি তুলেছিলেন নির্ভয়ে।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আসাদের রক্ত মাখা শার্টের ছবি
তাঁর কালজয়ী আলোকচিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম

৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময় মিছিলে স্লোগানরত নিহত টোকাইয়ের ছবি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক আগরতলা মামলায় হাজিরা দিতে যাবার দৃশ্য।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ১৯৭১-র ঐতিহাসিক ৭-ই মার্চের ভাষণের দৃশ্যটি।

৭-ই মার্চের ভাষণে জন সমুদ্র

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ছুটে বেরিয়েছেন রণাঙ্গনে, অনুসরণ করেছেন।


মুক্তিকামী জনতার কাতারে থেকেছেন অকুতোভয়।

রায়ের বাজারের বুদ্ধিজীবীদের নির্মম হত্যাকাণ্ডে তাঁর তোলা ছবি সেদিন বিশ্ব বিবেক কে নাড়া দিয়েছিল

তাঁর তোলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছবি।


স্বাধীনতার পর টাঙ্গাইলে কাদেরিয়া (কাদের সিদ্দিকীর নির্মম নির্যাতনের কাহিনী তাঁর ক্যামেরা বন্দি তাঁকে এনে দিয়েছিল পুলিৎজার পুরষ্কার)।

১৯৮২ থেকে ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তাঁর তোলা ছবি সারাদেশ ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি বহুবার
পুলিশের নির্দয়, নির্মম প্রহারে আহত হয়েছিলেন।
(ছবি গুলো কেউ শেয়ার করবেন কি?)

রশীদ তালুকদার ১৯৩৯ সালের ২৪ অক্টোবর ভারতের চব্বিশ পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন ।
বাবা চাকরি করতেন রাজশাহী। মাত্র ছয় বছর বয়সেই তিনি রাজশাহীর স্টার স্টুডিও-র মরহুম মোতাহার হোসেনের কাছে তার ফটোগ্রাফির হাতেখড়ি নেন।
১৯৫৯ সালে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগ দিলেন পি-আইডিতে (প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট)। বেতন ছিল মাত্র ৮০ টাকা
১৯৬১ সালে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে যোগ দিয়ে প্রায় একযুগ কাজ করেন।
আলোকচিত্রী হিসেবে তাঁকে জীবনের প্রথম এ্যাসাইনমেন্টটি দিয়েছিলেন শহীদুল্লাহ কায়সার।
১৯৭৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। টানা ২৯ বছর দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করে তিনি অবসরে যান ২০০৭ সালে।
এরপর থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই তিনি সময় কাটাচ্ছিলেন।

রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইহলোক ত্যাগ করেছেন এক ক্যামেরা সৈনিক রশীদ তালুকদার।
তাঁর ফেলে যাওয়া স্থান কখনোই পূর্ণ হবেনা।
মরহুমের শোকার্ত পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি।

কালজয়ী এই আলোকচিত্রীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

ছবি ও তথ্য: ইন্টারনেট

প্রস্তাবিত সম্প্রচার নীতিমালা ২০১১: আদিম গুহামানব যুগে প্রস্থান করতে চাই!

প্রস্তাবিত সম্প্রচার নীতিমালা ২০১১: আদিম গুহামানব যুগে প্রস্থান করতে চাই!


প্রস্তাবিত সম্প্রচার নীতিমালা পড়ার পর অনেক দিন বেকুবের মত ভেবেছি!
কোন কুল কিনারা না পেয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আদিম গুহামানব যুগে প্রস্থান করিব!
প্রস্তর দিয়া শিকার করিব, মনের ভাব আকারে ইঙ্গিতে প্রকাশ করিব, বনের রাজা ব্যাঘ্র মহাশয়ের পূজা করবো।
এছাড়া আর কোন গত্যন্তর আছে বলে আমার মনে হয়না! যেহেতু আমরা সভ্য সমাজে বসবাসের উপযোগী নই, সেহেতু আমাদের রশি দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে!
আমরা গরু-ছাগলের মত ভেঁ-ভেঁ,হাম্বা-হাম্বা করব আর মাথা দোলাবো।


এই রকম আবেদন নিয়ে অতি উৎসাহী কিছু নীতিনির্ধারক অতি সম্প্রতি জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছেন!
গণতন্ত্র,বাক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মন্দা,বেকারত্ব নিরসনে,ক্ষুধা-দরিদ্রতা নিরসনে নির্বাচিত সরকারগুলোর ব্যর্থতায় রাজনৈতিক দলগুলোর এবং এর নেতৃবৃন্দদের
অহরহ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় এবং এটাই স্বাভাবিক।

এই যে আলোচনা-সমালোচনা এর থেকেই সবাই ভুলগুলো শুধরে নিলে আইন করে অধিকারগুলো হরণ করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করিনা।

প্রস্তাবিত এই নীতিমালাকে সম্মান কিম্বা সাধুবাদ জানিয়ে এ পর্যন্ত কেউ পক্ষে তার সাফাই গেয়েছে বলে আমি দেখিনি, সমাজের সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এরপরও গুঞ্জন আছে এই নীতিমালাটিও আইন আকারে পাশ হতে যাছে।
এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর কিম্বা পরিকল্পনাকারীরা ভালো জানবেন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এমন অনেক নীতিমালা বা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে যেখানে জনমতের প্রতি শ্রধ্বাবোধ দেখানো হয়নি।

অনলাইন সংবাদ মাধ্যম,সংবাদ পত্র,বেসরকারি চ্যানেলগুলো সবাই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সম-অংশীদার। সবাই স্বাধীন দেশের নাগরিক। স্বাধীনতা ভোগ করার সুবিধা সবারই আছে।
একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন চিত্র-ই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
যদিও কতিপয় সংবাদপত্র,সংবাদ-সেবী,সুশীল সমাজের একটা অংশ জাতীয় জরুরি মুহূর্তে, জাতীয় নৈরাজ্যে এগিয়ে না এসে একপেশে মন্তব্য করে, হলুদ কিম্বা অপ-সাংবাদিকতা করে তথ্য বিকৃত করে অনেক ঘটনার, আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন, তারপরও বলি মিডিয়ার স্বাধীনতায় কোন সরকারের হস্তক্ষেপে কখনোই সফলতা বয়ে আনেনি, আনতে পারেনা।
তা দেশের বঞ্চিত, অবহেলিত জনগণের কথাই হোক, গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রেই হোক।

প্রস্তাবিত নীতিমালার যেসব বিষয়ে আপত্তির যথেষ্ট কারণ রয়েছে যেগুলো পড়লে মনে হয় সরকারের ভেতর একটি গুষ্ঠি ক্রমশ স্বৈরাচারী মনো ভাবাপন্ন হয়ে উঠছে, কিম্বা উঠতে চাইছে!
এরা দেশপ্রেমিক ধ্বজাধারী অশুভ-শক্তি বৈ আর কিছু নয়!
প্রস্তাবের এক যায়গায় বলা হয়েছে,
" রাজনীতির বিষয়ে নেতিবাচক কিছু প্রচার করা যাবে না।"
"সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বা মতামতও প্রচার করা যাবে না।"


এটা গণতন্ত্র চর্চার প্রতি প্রথম বাধা বা হস্তক্ষেপ বলে আমি মনে করি,,আগই বলেছি যার যার মত প্রকাশের স্বাধীনতা তার আছে। তার বক্তব্য জনগণের কাছে পৌঁছানোর অধিকার আছে বা থাকা উচিত।
জনগণের চোখ তো বাঁধা থাকছে না! ফলে ভাল-মন্দ স্থির করার দায়-ও জনগণের উপরই বর্তায়।
উল্লেখ্য সবগুলো প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে নিজস্ব মিডিয়া, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আছে বলে আমি মনে করি।

এরপর বলা হয়েছে:
"বেসরকারি সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে পরিবেশিত অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে খসড়া নীতিমালায় সম্প্রচারে ১৯৬৩ সালের ফিল্ম সেন্সরশিপ আইন অনুসরণের কথা বলা হয়েছে অ্যাক্টের অধীনে প্রণীত বিধি বা নীতিমালা অনুযায়ী কোন অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না।"
"প্রস্তাবিত নীতিমালায় উল্লেখ না থাকা সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তথ্য মন্ত্রণালয়।"


অর্থাৎ নীতিমালায় উল্লিখিত না থাকা কিছু কাল্পনিক বিধান যাকে "কালো আইন" হিসেবে অভিহিত করা যায়। এখানে সরকারের মনোভাব কেমন সেটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হতে হবে কি!


আরেকটি অংশে বলা হয়েছে:
"...কিংবা একটি বন্ধু ভাবাপন্ন বিদেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এমন ধরনের প্রচারণা যার ফলে সেই রাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সুসম্পর্ক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে এমন অনুষ্ঠানও করা যাবে না।"

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। যে আমাদের সীমান্তের তিনদিক ঘিরে আছে, ১৯৭১-র মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশটির অনেক অবদান আছে। ভারত আমাদের বন্ধু ,আমাদের প্রতিবেশী।

কথা হচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া দিয়েছে,আমাদের ছিটমহলে বন্দী করে রেখেছে,
আমাদের ৩ বিঘা করিডোর বুঝিয়ে দিচ্ছেনা, আমাদের প্রাপ্য পানির ন্যায্য হিস্যা না দিয়ে, সীমান্তে পাখির মত মানুষ মারছে এসব প্রচার করা হলে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে,
তাই বলে কি আমরা চুপ করে থাকব!

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন ," খসড়া নীতিমালাটি অনলাইনেও দেওয়া হবে। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ মতামত দিতে পারবেন। অনলাইনে পাওয়া ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ মতামত কমিটি বিবেচনায় নেবে।"

সম্প্রচার নীতিমালা যদি হয় বাক-স্বাধীনতার উপর খড়গ তা হলে বলতে হবে গণতন্ত্র তোমার মুক্তি এখনও হয়নি। স্বাধীনতার সুফল এখনও জনগণের কাছে পৌঁছেনি।

আমি আমার মতামত জানালাম।
আমার সাথে আর কেউ তাদের মতামত শেয়ার করবেন কি !

ছবি: আন্তজাল

অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার: কি করবেন!!"ভাবনাটি আপনার": কি করবেন!!"ভাবনাটি আপনার"

অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার: কি করবেন!!"ভাবনাটি আপনার": কি করবেন!!"ভাবনাটি আপনার"



১৯৮০ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় মার্ক এঞ্জেলোর নেতৃত্বে নদী বাঁচাও আন্দোলনের সূচনা হয়।
এরপর ২০০৫ সালে বিশ্ব নদী দিবস জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবার দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
'অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার।' স্লোগানে বাংলাদেশে এবারের নদী দিবস উদযাপিত হচ্ছে।

৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশ বাংলাদেশকে এক সময় বলা হত নদীমাতৃক দেশ।
দেশ জুড়ে বয়ে চলা ২৩০টি নদীর বুক চিরে একসময় সারাদেশ ব্যাপী নৌকা-লঞ্চ-স্টিমারের আনাগোনায় মুখরিত ছিল।
নদী তীরবর্তী অনেক অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল পণ্য উঠানামার বন্দর।
বর্ষায় নদীগুলো যখন পানিতে টই-টম্বুর তখন গেরস্তের ঘরে উঠত পাকা আউশ ধান, সোনালী আঁশের পাট বিক্রির ধূম পড়ে যেত।
কৃষকের হাতে তখন নিরবচ্ছিন্ন সময়। শুরু হতো বৌ-ঝিদের বাপের বাড়ীতে নাইওর আনা নেয়া।
থই থই পানিতে ভরা বিলে থোকায় থোকায় শাপলা ফুটে থাকত। পানকৌড়িদের ডাকে বিলে আছড়ে পড়ত অদ্ভুত শব্দ। গায়ে শিহরন জাগাত।
কিশোর কিশোরীরা দলে দলে ডেঁপ কুড়াতে, নাইতে নেমে যেত। জেলেরা স্রোত মুখে নানা রকমের জাল দিয়ে, চাই পেতে মাছ ধরত। শুকনো মৌসুমে মাছ ধরবে বলে নতুন জাল বুনত।
স্বাধীনতার অল্প ক'বছরের মধ্যেই চাল-চিত্র পাল্টে যেতে থাকে।
আজকের শীর্ণকায়া নদীগুলো শুধুই কালের সাক্ষী হয়ে মানচিত্রের বুকে ক্ষীণ রেখা হয়ে আছে।
এর জন্য কে দায়ী?
১।আমাদের প্রতিবেশী একটি দেশের আগ্রাসী মনোভাব আমাদের নদীগুলোর অপ-মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
দেশটি দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদীর ৪৭টির উজানে অযৌক্তিক ভাবে দুই শতাধিক বাঁধ নির্মাণ করেছে । এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফারাক্কা বাঁধ।
এই সমস্ত বাধের কারণে এবং দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন চুক্তির প্রতি ভারতের অবজ্ঞা প্রদর্শন, প্রাপ্য পানির ন্যায্য হিস্যা প্রদান না করায় দেশে এখন ভরা বর্ষা মৌসুমেও
নদীগুলো পানিশূন্য থাকছে।
তিস্তার পানি দেশটি একতরফা ভাবে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি এজেন্ডায় থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির
বাধার কারণে তিস্তা চুক্তি হয়নি এটা ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি।
একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর হুমকিতে পরাস্ত হয়েছিলেন কি-না তা মাওলানা ভাসানীর মত

লং-মার্চ করা (ফারাক্কা অভিমুখে) নেতা বেচে থাকলে বলতে পারতেন।
এছাড়াও ভারত টিপাই মুখে বাধ দিয়ে সংশ্লিষ্ট নদী গুলোকে আরও এক দফা পানিশূন্য করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারত আন্তর্জাতিক নদী আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। দেখার কেউ নাই।

২। অধিকাংশ নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে গিয়েছে। অপরিকল্পিত বাঁধ, কালভার্ট, সেতু নির্মাণের কারণে নদীর গতিপথ বদলেছে। এক কথায় বলা যায় যত্রতত্র বাঁধ, পোল্ডার
ও এমব্যাংকমেন্ট নির্মাণ নদীগুলোর গতিপথ বদলে দিয়েছে। এছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য যে সমস্ত খাল, ডোবা, বিল, হাওর ছিল তা বিলীন হয়ে গিয়েছে কিম্বা ভূমি-দস্যুদের কবলে পড়ে ভরাট হয়ে গিয়েছে।

৩। অপরিকল্পিত শিল্প, কল-কারখানার অনুমোদনের কারণে এবং এসব শিল্প, কল-কারখানার বর্জ্য ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বা পরিশোধন না করে সরাসরি নদীতে নিক্ষেপ করার কারণে।
ক্যামিকেল বর্জ্য, পলিথিন এবং আবর্জনা নিক্ষেপ করে নদী দূষণ করা হচ্ছে।

৪। মানুষের লোভের কাছে পরাস্ত হয়েছে আমাদের নদীগুলো। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বংশী, তুরাগ নদীর মত অনেক নদী অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে যাচ্ছে। ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধের দুই পাশ বালু উত্তোলনকারী ও শক্তিশালী সিন্ডিকেট গুলোর হাতে দখল হয়ে গেছে।

নদী গুলো রক্ষা করতে হবে। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে।
বর্তমানে ভু-গর্ভস্থ পানির স্তর যেভাবে নীচে নেমে যাচ্ছে তাতে আগামীতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা, বন্যা মহামারী, খরা দেখার জন্য আমরা তৈরি হবো নাকি নদীগুলো রক্ষায় সোচ্চার হব, "ভাবনাটি আপনার"।

ছবি: ইন্টারনেট

নারী ও শিশু নির্যাতন: শশুর বাড়ি জিন্দাবাদ

নারী ও শিশু নির্যাতন: শশুর বাড়ি জিন্দাবাদ

আমাদের কোম্পানির এসফল্ট প্লান্টে (বিটুমিন তৈরির) প্রচুর বাঙালি কাজ করে। এদের অনেকের সাথে আমার হৃদ্যতাও গড়ে উঠেছে।
ডাক্তারের বারণ থাকা সত্ত্বেও গত রোজার মাসে ২/৩ দিন তাঁদের সাথে দেশীয় ইফতার (ভাজা-পোড়া) খেয়েছি।
এদের মধ্যে একজন আমায় জামাতা বলে ডাকে!
তাঁর ৮ বছরের মেয়ে টুনি ফোন করলেই বলে, "মুঝছে শাদী করোগী?"
বলি, "কিউঁ নেহি"! সে হেসে গড়াগড়ি খায়। মনে মনে ভাবি, "আকাশ সংস্কৃতি তোর বদলে গাঁও গেরামের ছেলে মেয়েও আজকাল হিন্দি ছবির ডায়লগ বলে!"
শনিবার রাত ১০টার দিকে তাঁর ফোন পেলাম।
ঘটনা শুনে অনেকক্ষণ থ হয়ে বসে রইলাম!
তাঁর বোনের বিয়ে হয়েছে ১৬ বছর। ভগ্নীপতি ঢুবাই থাকে।
৫ ননদের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। ভায়েরা আলাদা।
এক ননদ ও তার জামাতা মিলে চাপ দিচ্ছিল, 'ভাইকে বল তোমাদের জামাইয়ের ব্যবসা খারাপ। ঈদের আগে কিছু টাকা দিতে, দোকানে মাল তুলবে"।

গৃহ বধূটির দুটি সন্তান পড়ালেখা করে জামাই যে টাকা পাঠায় তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যায়।
তবু বরকে বুঝিয়েছে,"দাও না কিছু টাকা, বেচারা বিপদে পড়েই এসেছে।"
বরটি টাকা না দিয়ে উল্টো বোনকে ফোনে ধমকেছে।
এই হল ঘটনা।
ননদের জামাই আর ননদ মিলে ভাবিকে প্রচণ্ড মার-ধর করেছে।
দুই সন্তান বাধা দিলে তাদেরও মার-ধর করা হয়েছে।

মারের চোটে গৃহ-বধূটি অজ্ঞান হয়ে পড়লে শশুড় বাড়ির লোকেরা তাকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ঢামেক এর ইমার্জেন্সীতে নিয়ে যায়।
বধূটি আত্ম-হত্যার অপ-চেষ্টা করেছে বলে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করে।
রোগিণীর ঠাঁই হয় ইমার্জেন্সী ওয়ার্ডের বারান্দায়।
অচেতন পড়ে আছে।
ডাঃ দেখেনি ।
পারলে যেন কিছু করি।


শুরু হল আমার ফোন। এই বেসরকারি চ্যানেলের অমুক, ঐ চ্যানেলের তমুক, অমুক পত্রিকার তমুক, কাউকে বাদ দিলাম না।
সেই রাতে কেউ ফোন ধরল না কিম্বা বন্ধ ছিল!
নিজেই লজ্জা পেলাম রাত ২টায় আমি কেন তাঁদের বিরক্ত করছি!
এক বন্ধু ঠিক কল ব্যাক করল। জানতে চাইল, " দোস্ত এত রাতে? সব ঠিক আছে?"
তাঁকে সব বললাম। এ-ও বললাম আগে ভিক্টিমকে বাঁচাও।
বন্ধু আমার কি করেছে জানিনা শুধু এইটুকু জানতে পেরেছিলাম, ভিক্টিম সিট পেয়েছে,
ডাঃ, নার্স সার্বক্ষণিক তৎপর, বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছে!
বন্ধু তোমায় লাল সালাম।
সকালে ক্র্যাব (ক্রাইম রিপোটার্স অব বাংলাদেশ) এর মেডিকেল রিপোর্টাররা আহতের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
রোগিণীর জ্ঞান ফিরেছে, কথা বলা বারণ।

ভার্চুয়াল জগতের যাদেরকে আমি চিনি, যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লম্বা চওড়া কথা বলেন, যারা এতটাই প্রভাবশালী যে ইচ্ছে করলেই মানবিক কারণে রোগিণীর পাশে দাঁড়াতে পারতেন। আমি তাদের কাউকে ই-মেইল, কাউকে ফেসবুকে লিখেছিলাম।
তাঁরা জবাব পর্যন্ত দেননি! কেন দেননি আমি জানিনা। শুধু একজন পুলিশের কর্মকর্তা (বিশেষ শাখার) জবাব দিয়ছিলেন।
নিজেদের লোকবলের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তাঁর পক্ষে যতখানি করা সম্ভব করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন।
তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। আপু তোমার জন্য শুভকামনা।

পরের ঘটনা অনেক সংক্ষিপ্ত; আমার এক ক্লাস-মেট পুলিশের বড়-কর্তা (বিসিএস), তাঁকে ফোন করেছিলাম।
বলে, "বন্ধু কাউকে লাগবে না, মেডিকেল সার্টিফিকেট লাগবে না। রোগীর আত্মীয় স্বজনের কাউকে থানায় যেতে বল এখুনি।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে সবাই গ্রেফতার হয়ে যাবে। এটা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা।
ভিক্টিমের জবানবন্দী ১ ঘণ্টার মধ্যে নেয়া হবে।
এমন রিমান্ডে দিমু মেয়েদের গায়ে হাত তুলতে ৫০ বার চিন্তা করবে।"

ঘাম দিয়ে জর ছাড়ল! যাক এখনও ভাল কিছু মানুষ এদেশে আছে। বন্ধু তুমি আর তোমার মত করিৎকর্মা পুলিশ অফিসারদের আমার শুভেচ্ছা।

অল্পক্ষণের মধ্যেই ফোন পেলাম। রোগিণীর ভাই বলছে, প্লীজ পুলিশকে থামান। আমরা চাইনা অঘটন ঘটে যাক।
এখন পুলিশ যদি আসামিকে ধরে আর মারধোর করে তবে দুটি সন্তান সহ বোনটির দায় আমাদের কাঁধে এসে পড়বে!
এই আক্রার বাজারে এদের ভরন পোষণ কি করে করবো?
আর সাংবাদিক ভাইদের বলেন "ঘটনা যেন মিডিয়ায় প্রকাশ না করে"।
ক্ষেপে গেলাম। বললাম, "ঐ মিঞা বোনটার জ্ঞান যদি আর না ফিরত? কি করতেন বোনের শশুর বাড়ীর আত্মীয় স্বজন দিয়ে"?
আবার ভাবি, "সত্যি-ই তো কে নেবে তাঁর দায়?"

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আমার ভগ্নীপতি বাংলাদেশে আসছে রবিবার। সে দায়িত্ব নিয়েছে। বোন ও তাই চায়।
তাছাড়া পঞ্চায়েত, ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, উপ-জেলা চেয়ারম্যান সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।

জয় হোক মানবতার!
বধূটি সুস্হ হয়ে ঘরে ফিরেছে।

মনটা তবুও অশান্ত। কত গৃহবধূ রোজ নির্যাতিত হচ্ছে, এমন কত ঘটনা সবার অগোচরে থেকে যাচ্ছে!
ক'জনের খবর সংবাদ মাধ্যমে আসে?
সবাই যদি গৃহ-বধূ রোমানার মতো সাহসী হতো তবে দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন কারীরা একটু চুপসে যেত!
সবাই যদি রোমানার মত বড় পরিবারের মেয়ে হতো?

ছবিঃ দি ডেইলি স্টার ১৪, সেপ্টেম্বর,২০১১ এর সৌজন্যে।

শহর রক্ষার বেড়ীবাঁধ: যেখানে সীমান্ত তোমার সেখানেই দখল আমার

শহর রক্ষার বেড়ীবাঁধ: যেখানে সীমান্ত তোমার সেখানেই দখল আমার



জন্ম থেকেই দেখে আসছি বুড়িগঙ্গাকে। ঢাকাকে ঘিরে গড়ে উঠা বুড়িগঙ্গার কত শত ইতিহাস।
সেই বুড়িগঙ্গা আজ মরে গেছে! আমরা বাঁচাতে পারছিনা আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সৌন্দর্য, আমাদের গর্বের বুড়িগঙ্গাকে।



চারপাশে পরিবেশবাদীরা, সাধারণ মানুষেরা কত-ই না সোচ্চার বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে।
শুধু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে ভূমি দস্যুদের হাতে এর বিস্তীর্ণ অংশ দখল হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত!

১৯৮৬ এবং ১৯৮৭ সালের ভয়াবহ বন্যা আর ঢাকাকে ঘিরে জলাবদ্ধতা দূর করার লক্ষ্যে তৎকালীন সামরিক শাসক এবং একপাল তথাকথিত নগর পরিকল্পনাকারীদের
সুপারিশে ঢাকা শহর রক্ষা বাধ বা ঢাকার চারপাশে বেড়ীবাঁধ দেয়ার এক বিশাল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে গিয়েই মূলত বুড়িগঙ্গার নাব্যতা, বুড়িগঙ্গার ব্যাপক অংশের স্রোতের গতিধারা বদলে ফেলা হয়।

আমার মনে আছে পূর্ণ বর্ষায় নদী যখন টইটম্বুর তথন-ই হাজার হাজার বালুর ট্রলার দিনরাত নদীবক্ষে বালু ফেলে যাচ্ছিল।
নদীর তলদেশে কয়েক স্তর বালু তখনই এর পানির ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছিল। বলা যায় চর পড়ে গিয়েছিল।

এছাড়া রাজধানীর সোয়ারী ঘাট এলাকা, রহমতগঞ্জ, লালবাগ কেল্লার পিছনের অংশ, কেল্লার মোড়, শহীদ নগর, আমলিগোলা,
নবাবগঞ্জ পার্ক, নদীর মাঝখানে টং জাতীয় ঘর করে থাকা জেলে পরিবার তথা জেলে পাড়া, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির সামনের অংশ,
কোম্পানি ঘাট, ঝাউচর, বছিলা, রায়ের বাজার টালি অফিসের নিম্নাংশ, মোহাম্মদপুরের নিম্নাংশ, গাবতলি হয়ে তুরাগ নদী পর্যন্ত সর্বত্র নদীর ২০০ থেকে ৫০০ মিটার
পড়ে যায় বেড়ীবাঁধের ভিতর অর্থাৎ কিছু লোক রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয় যায়।


বাকী হাজার হাজার একর জমিন এক সময় বেদখল হয়ে যায় রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায়।
প্রথমে ব্যাঙের ছাতার মত ভুঁইফোড় ক্লাব, সরকারী দলের অফিস, সমবায় সমিতি ইত্যাদির অফিস গজিয়ে উঠে পুরো বেড়ীবাঁধ এলাকায়।
এক সময় ক্ষমতাসীন নেতাদের, ঘুষখোর প্রশাসনের সহায়তায় প্রকাশ্যে এসব জমি তাদের দখলে চলে যায়।

একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল ঠিক বুড়িগঙ্গার উপর এখনও সবার দিকে অঙ্গুলি তাক করে আছে!
এরাই সর্বপ্রথম বেড়ীবাঁধের বাইরে গিয়ে নদী ভরাট করে হাসপাতাল ও কলেজটি চালু করেন। শোনা যায় হাসপাতালটির মালিকের রাজনৈতিক প্রভাব এতো বেশি যে
তার বিরুদ্ধে টু শব্দটি করার জো নেই কারো!

সেই যে পলি বা বালু নদী গর্ভে নিক্ষেপ করা হয়েছিল যার কারণে বেড়ীবাঁধের বাইরের অংশে নদীর নাব্যতা হ্রাস পায়, বিভিন্ন স্থানে বিস্তীর্ণ জমি নজরে পড়ে ভূমি দস্যুদের।

ডিপ জলের দখলে চলে যায় মিরপুরের গাবতলি এবং তৎসংলগ্ন এলাকার বিরাট অংশ।
লালবাগ-হাজারীবাগের প্রাক্তন দুই সাংসদ দখল করে নেন পুরো এলাকা!
হাজি সেলিম বাবু বাজারের বিপরীত দিকে কালীগঞ্জে নদীর উপর বহুতল মার্কেট ভবন, রহমতগঞ্জ এলাকায় মদিনা প্লাস্টিকের গোডাউন সহ বহু যায়গা নিজ দখলে এবং
দলীয় কর্মীদের দখলে সহায়তা দিয়েছিলেন বলে খবরে প্রকাশিত হয়েছিল।
আরেক প্রাক্তন সাংসদ হাজি পিন্টু প্রথমে বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদী ভরাট করে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করার পরপরই বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের দুই পাশের নদী অবৈধ দখলদারদের
হাতে চলে যায় তাঁর-ই সহায়তায়।
সেই সময় বেড়ীবাঁধের ভিতরের অংশে তাঁর নানার নামে খলিল সর্দার কৃষি মার্কেট নির্মাণ সহ অনেক জমি দখল করে নেন।
জোট সরকারের আমলে কোম্পানি ঘাট কামরাঙির চর সংযোগ সেতুর টেন্ডার পায় নাসির উদ্দিন পিন্টুর নিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আশা এন্টারপ্রাইজ, কোটি টাকা ব্যয়ে ণির্মিত এই সেতু
নদী ভরাট করে সামান্য অংশে নির্মাণ করা হয়, সেতুটি অত্যন্ত সরু।

এই সেতু নির্মাণের সাথে সাথে সেতুর দুই পাশ ভূমি দস্যুদের দখলে চলে যাচ্ছে, চলে গেছে। নির্মিত হয়েছে বহুতল বিশিষ্ট ভবন, পান্না ব্যাটারি, গ্যাস ফিলিং ষ্টেশন,,,,,

( ছবিতে ব্রিজের একাংশ দেখানো হয়েছে)

এছাড়াও কেল্লার মোড় ,কামরাঙির চর, বছিলা, ঝাউচর এবং অন্যান্য স্থানে যে সব ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত সরু হওয়ায় ব্রিজের দুই পাশ ভরাট করে দখল করা হয়েছে।

নদীর তীরবর্তী ২০০ গজের মালিকানা বি,আই,ডব্লিও,টি,সি'র। এই ২০০শত গজ বাদ দিয়েও প্রতিনিয়ত নদী ভরাট হচ্ছে, জবর দখল হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।

(এরা বিদ্যুৎ সংযোগ পেল কি করে?)

অবৈধ দখলকারীরা এসব সরকারি সম্পত্তি নিজেদের নামে কি করে রেকর্ড করে খাজনা-পাতি দিচ্ছে, কি করে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে জানতে চাই।
কত টাকার বিনিময়ে এসব অবৈধ দখলদারদের হাতে সরকারি জমিন তুলে দেয়া হচ্ছে? তারা কারা?
রাজনৈতিক নেতা, আমলা, সাংসদদের লালসা কবে কমবে?

কেন অবৈধ দখলমুক্ত করা হবেনা এই মর্মে উচ্চ আদালতের নোটিশ জারি হলে কিম্বা পত্র-পত্রিকায় লেখা লিখি হলে কয়েকদিন
তথাকথিত উচ্ছে অভিযান চলে, তারপর আবার সুনসান নীরবতা??
আমরা জনগণ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে সবিনয় জানতে চাই আপনাদের কি কোন দায়িত্ব নেই?
পরিবেশ বাঁচাতে, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে সরকারগুলো কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে?

(ছবি সত্ত্ব সংরক্ষিত)

রোজ ঘুমাতে যাবার আগে যে স্বপ্ন দেখতে চাই

রোজ ঘুমাতে যাবার আগে যে স্বপ্ন দেখতে চাই




১।ভারতের সাথে সম্পাদিত ট্রানজিট চুক্তি এবং অন্যান্য চুক্তির খসড়া জন সমক্ষে প্রকাশিত হয়েছে।

২।আমিন বাজারে ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনায় প্রকৃত দোষী ধরা পড়েছে।

৩।মিডিয়ার সামনে দলের মুখপাত্র ছাড়া অন্য কেউ " কম করে খান" টাইপের বক্তব্য দিচ্ছেন না।

৪।আবুল হোসেন ঢাকা ময়মনসিংহ সড়ক দুর্ঘটনায় পড়তে গিয়েও মুরুব্বীদের দোয়ায় বেচে গেছেন।

৫।দুদক একতরফা কাজ করছে বলে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

৬। বঙ্গবন্ধুর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খালেদা জিয়া আর কেক কাটছেন না।

৭। দেশের সর্বশেষ রাজাকারটি পুকুর ঘাটে আছাড় খেয়ে মারা গেছেন।

৮। সাহারা খাতুনরা ফারুকের ধোলাইয়ের ঘটনাটি মিডিয়ার বাড়াবাড়ি বলে বিবৃতি দিচ্ছেন না।

৯।............................

১০।.........................

এসব স্বপ্ন দেখিনা আর তাই আমারও কলম বিরতি চলছে। নতুন কোন লেখায় হাত দিইনি।

এরা চুনোপুঁটি অথচ কত সংঘবদ্ধ!

এরা চুনোপুঁটি অথচ কত সংঘবদ্ধ!



বিডি'তে থাকতে পারিবারিক ব্যবসার দেখা শোনা করতে প্রায়-ই ফেঞ্চুগঞ্জ,শ্রীমঙ্গল,মৌলভীবাজার এবং সিলেটে যাতায়াত করতে হতো।
২০০১ এর মাঝা মাঝি সময়ে আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে সিলেট থেকে ঢাকা আসছি:-

১। ভৈরব জংশনে বসে আছি ইঞ্জিন বদল হবে, ডাব বিক্রেতা,সিগারেট বিক্রেতা সবার ঝুড়ির নীচে বোতল চোখের ইশারায় বেচাকেনা!

২। বিডিয়ার জওয়ানরা (অধুনা বিলুপ্ত) হাতে স্ক্রু-ড্রাইভার নিয়ে ট্রেনের কামরার এখানে ওখানে খোঁচা-খুঁচি করলেন, এদিক সেদিক উঁকি-ঝুঁকি মেরে নেমে গেলেন।
লুঙ্গী পরা মাঝ বয়সী একজন লোক এলেন,আশ্চর্য দক্ষতায় ট্রেনের দরজার ফ্রেম (ভিতরে বেশ ফাঁপা) খুলে ফেললেন দ্রুততার সাথে ফাঁপা জায়গাটিতে দুইটি বান্ডিল রাখলেন।
মূহুর্তের মধ্যে ফকিরনি টাইপ দুজন মহিলা এসে দরজায় পিঠ দিয়ে বসে পড়লেন। ঐ লোকটিকে আর দেখলাম না।
এটেনডেন্সকে কোথাও দেখতে পেলাম না।

৩। বাইরে তাকিয়ে দেখি বিডিআর সদস্যরা একজনকে তাড়া করছে, সবাই বন্দুক উঁচিয়ে কারো পিছু নিলো।
ষ্টেশন ফাঁকা।
সেই ফাঁকে আমাদের কামরায় এক দম্পতি উঠে এলেন,হাতে বিশাল ট্রলি ব্যাগ!
শ্রীমঙ্গল থেকে ট্রেনটির প্রতিটি আসন যাত্রীতে পুরো ছিল।
ভৈরব এসেও দেখেছি সবাই আছেন।
অথচ এখন দেখি দুটো সিট ফাঁকা পড়ে আছে!
দম্পতির জন্য এই আয়োজন সবই একটা পরিকল্পনার অংশ বিশেষ!!
খুব রোমাঞ্চিত হচ্ছিলাম চোখের সামনে চোর-পুলিশ খেলা!!

৪। ট্রেন ছেড়ে দিল খিলগাঁও এসে দাড়িয়ে গেল;দম্পতি নেমে গেল, ফকিরনি টাইপ বুয়া দুজন নেমে গেল।
উঠে এলো ১৫/১৬ বছর বয়সী এক কিশোর।
মাদ্রাসা ছাত্রদের পোশাক পরনে।
মাথায় টুপি।
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি।
কমলাপুরে ট্রেন থামবে থামবে অবস্থা ছেলেটি দ্রুততার সাথে একটি চটের ব্যাগ বের করলো,
ঝটপট দরজার ফ্রেমের ভিতরে লুকানো বান্ডিল দুটো ভরল।

তাকে আজ পুলিশে দেব এমন ভাবনা নিয়ে আমিও আমার ব্যাগ নিয়ে নীচে নামলাম।
কোথাও দেখতে পেলাম না! শত শত যাত্রীর ভিতর সে একেবারে হাওয়া!

অনেক বছর পর কথাগুলো আজ আবার মনে পড়লো। মাদ্রাসা ছাত্রের লেবেল যাকে পড়ানো হল সে কি আদৌ মাদ্রাসার ছাত্র ছিল?
ভৈরব ষ্টেশনে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী যা করেছিল তাও কি সাজানো ছিল?
নিরাপত্তা তল্লাশির পর ঐ দম্পতি ট্রেনে চেপেছিল,তাদের জন্য সিট দুটি কোথা হতে বুকিং দেয়া হয়েছিল?
আর তাদের ঐ বিশাল ট্রলি ব্যাগ গুলোতে কি ছিল?
তেজগাঁও কিম্বা খিলগাঁও এলে ট্রেন চালক কার ইশারায় এবং কাদের স্বার্থে ট্রেন থামিয়ে দেয়?

বিচ্ছিন্ন এই ঘটনাগুলো একত্রিত করলে আমরা কি দেখতে পাই?

যাদের অঙ্গুলি হেলনে এসব ঘটছে তাদের খুঁজে বের করার মত দক্ষ,স্বাধীন আর আধুনিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রত্যাশা করাটা কি আদৌ অসমীচীন?

আমার ঈদ ভাবনা: ZERO Gravity তে ভাসছি!!!

আমার ঈদ ভাবনা: ZERO Gravity তে ভাসছি!!!

আমার ঈদ চিন্তা, এবং মনের অনেক প্রশ্ন,,, জবাব গুলো খুঁজে বেড়াচ্ছি......


১। উত্তরবঙ্গে গ্রাম্য শালিসে ইউপি চেয়ারম্যান ও গাঁয়ের তথাকথিত মোড়ল কর্তৃক প্রকাশ্যে নির্যাতন কারীদের এবং ঐ গৃহবধূর ঈদ কেমন হবে?



২। সাভারের আমিন বাজারে পুলিশের উপস্থিতিতে ডাকাত সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারা ৬ ছাত্রের পরিবার ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ঈদ কেমন হবে?


৩। মিরেরসরাইয়ে ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত অর্ধশতাধিক পরিবারের সদস্যদের ঈদ কেমন হবে?




৪। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথেরিন, তাঁর পরিবার এবং নিহত মিশুক মুনীরের স্ত্রী মঞ্জুলী ও তাঁর পরিবারের ঈদ কেমন হবে?



৫। রাজনৈতিক হয়রানি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক বিচার অপেক্ষায় নেতা কর্মীদের ঈদ কেমন হবে?


৬। ১/১১ এর রূপকার, বিদেশী প্রভুদের ইংগিত ও ষড়যন্ত্রে ৩ উদ্দিন গংয়ের গ্রেফতার, নির্যাতন, অপমান হয়রানির স্বীকার যারা হয়েছিলেন তাদের ঈদ কেমন হবে!!

মঈন উদ্দীনকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি দাড় না করিয়ে নিরাপদে দেশ ত্যাগ করার সুযোগ দান কারীদের ঈদ কেমন হবে?


৭। বিডিআর বিদ্রোহের পরিকল্পনাকারী ও হত্যায় জড়িত সন্দেহে আটকদের ও তাদের পরিবারের ঈদ কেমন হবে?


৮। জেল খানায় আটক যুদ্ধ অপরাধী ও তাদের পরিবারের (না কি এটাই তাদের জীবনের শেষ ঈদ হতে যাচ্ছে?) ঈদ কেমন যাবে?


৯। অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, যোগাযোগ মন্ত্রী, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবীতে যারা সোচ্চার তাদের ঈদ এবং

মন্ত্রীসভা থেকে এদের বহিষ্কার কেন করা হবেনা এই মর্মে কাল্পনিক কোন উচ্চ আদালতে মহামান্য বিচারপতি সরকারের প্রতি রুল জারী করে বসলে তাঁর ঈদ কেমন হবে?


হাসিনা, খালেদা, এরশাদ আপনারা দ্যাশের মা বাপ! আপনাদের জন্য ঈদের শুভেচ্ছা!!


ঈদ মোবারক।

ছবি সূত্র: আন্তঃজাল।