জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

আপনার ফেসবুক একাউন্টটি কতখানি নিরাপদ!

আপনার ফেসবুক একাউন্টটি কতখানি নিরাপদ!



হ্যাকিং আতংকে ভুগেন না খুব কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠান,তারকা কিম্বা ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এর ব্যাবহারের সুফল যেমন আমরা ভোগ করছি তেমনই এর অপব্যবহার আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে অনেককে-ই।
ফেসবুক বর্তমানে অত্যধিক জনপ্রিয় একটি সামাজিক সেতু-বন্ধন সাইট হিসেবে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
সেই সাথে এতে নানাবিধ অপব্যবহারের কথা ধরলে বলতে পারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বাদ যাননি।যার ফলশ্রুতিতে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সরকার এটি কিছুদিনের জন্য ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী,বিরোধীদলীয় নেতা জনপ্রিয় তারকাদের একাধিক ব্যক্তিগত একাউন্ট এখানে দেখা যায়।বাস্তব সত্য হল এদের প্রায় সব গুলোই ভুয়া বা FAKE।
নিজে একটা তাগিদ অনুভব করছিলাম কিছুদিন ধরে বিশেষত আমার ফেসবুক বন্ধুদের কথা ভেবে।নিজের কমপিউটর বিষয়ক ক্ষুদ্র জ্ঞান ও নানা তথ্য যোগার করে যা পেয়েছি তা তুলে ধরছি:-
হ্যাকার বলতে আমরা বুঝি এক কিম্বা একের অধিক চৌকস কমপিউটর প্রোগ্রামার যারা বিভিন্ন ব্যক্তি কিম্বা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি সিস্টেম অচল করে PC গুলোতে ডুকে পড়ে।
এটা করতে তারা বিভিন্ন প্রোগ্রাম তৈরি করে ব্যবহারকারীর কমপিউটরে ঢুকে পড়ে এবং পুরো কমপিউটরের নিয়নত্রন নিয়ে নেয়।
অনেক সময় তারা সমস্ত তথ্য উপাত্ত মুছে ফেলে।
অন্যদিকে মোটামুটি অদক্ষ,নবীশ হ্যাকাররা আজকাল ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বেশী বেশী টার্গেট করেছে।
আমাদের দেশের অনেকে কম্পিউটরের বিভিন্ন নিরাপত্তা এবং ব্যবহারে দক্ষ নয় হ্যাকার সেই সুযোগটি নিয়ে আপনার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে;কমপিউটর সম্পর্কে আপনার জ্ঞান কত খানি সেটা জানার পর সে আপনাকে নানাভাবে সাহায্য করার কথা বলে কোন একটি লিংক/এটাচমেন্ট আপনাকে পাঠাবে যেটিতে ক্লিক করা মাত্র স্পাইওয়্যার,পিসিং সফটত্তয়্যার আপনার অজান্তে পিসিতে ইনস্টল হয়ে যাবে এবং হ্যাকার নীরবে আপনার প্রতিটি গতিবিধি লক্ষ্য করবে।
এদের নানা রকম উদ্দেশ্য থাকে গোপন সমরাস্র,গোপনীয় রাষ্ট্রীয় তথ্য,জঙ্গিবাদের জন্য তথ্য ইত্যাদি,,অর্থের বিনিময়ে অন্যপক্ষের হাতে তুলে দেয়া এবং ব্যক্তিগত ভাবে ব্ল্যাক-মেইল বা অন্যকোন ফায়দা লোটা।
ফেসবুক,ইয়াহু,গুগল,এমএসএন আইডি/পাসওয়ার্ড হ্যাকিং:-
যেহেতু ফেসবুকে লগইন করতে একটি ই-মেইল আইডি ব্যাবহার করতে হয় তাই একজন হ্যাকার প্রথমে টার্গেট করবে আপনার ই-মেইল পাস্ওয়ার্ডটি কিভাবে তার আয়ত্বে আনা যায়।
যখনই সে এটি পেয়ে যাবে তৎক্ষণাৎ সে নতুন পাস্ওয়ার্ড দিয়ে আপনার লগইন বন্ধ করে দিবে অতঃপর ফেসবুকে লগইন করতে নতুন পাস্ওয়ার্ড অনুরোধ করবে।
এভাবেই আপনার তিল তিল করে গড়ে তোলা সাম্রাজ্যটি আপনার হাতছাড়া হয়ে যাবে।
আপনার বন্ধুরা যারা আপনাকে চিনত,বিশ্বাস করে অনেককিছু শেয়ার করত তারাও ঘুণাক্ষরেও টের পেলনা যে আপনি আর তাদের মাঝে নেই।
এখন হ্যাকার মেতে উঠবে পৈশাচিক উন্মত্ততায় কারণ সে যেনে গেছে আপনার এবং আপনার বন্ধুর দুর্বলতা গুলো।
দেখা গেলো আপনার ইন-বক্স থেকে নানা রকম কু-প্রস্তাব গেলো,কু-রুচি পূর্ণ ভিডিও গেলো এমন একজনের কাছে যিনি আপনার বড় বোন কিম্বা খালা কিম্বা এমন নিকটাত্মীয়।তিনি তখন হতভম্ব হয়ে পড়বেন!সাথে আপনিও!
মানসিক বিকারগ্রস্ত ওই উন্মাদও তাই চায় যাতে আপনি তাকে কেয়ার করেন,ভয় পান।
বিশেষকরে ডেটিং-সাইট গুলো,TUBELY ,ZOOSK সহ নানান সাইট আপনাকে অনলাইন ডেটিংয়ে উৎসাহিত করতে আমণত্রন জানাবে যেখানে একাউন্ট খুলতে আপনার ইয়াহু,গুগল,এমএসন আইডি এবং পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হবে।আপনি আপনার দেয়া ই-মেইল পাসওয়ার্ড তৎক্ষণাৎ হ্যাকারকে দিয়ে দিলেন এটা বুঝবার আগেই সব হাতছাড়া হয়ে যাবে।
বিভিন্ন পর্ণো সাইটে কোন এটাচমেন্ট বা ভিডিও দেখতে হলে আপনাকে তাদের নির্ধারিত প্লেয়ারটি ডাউন-লোড করতে হবে তখন স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার আপনার পিসি তে ডুকে পড়তে পারে।
এছাড়া যারা মযিলা ফায়ারফক্স ব্যবহার করেন তাদের পিসিতে জাভা প্লাগইন এর মাধ্যমেও হ্যাকার তার নির্ধারিত প্রোগ্রামটি আপনার পিসি তে প্রবেশ করাতে সক্ষম হবে।
কিভাবে প্রতিরোধ করবেন:
১.Firewall:ফায়ারওয়াল হল ইন্টারনেট সিকিউরিটির অন্যতম মাধ্যম।আপনার কম্পিউটরের ফায়ারওয়াল ON রাখুন এটা নেটে অদৃশ্য কাঁচের দেয়ালের মত আপনার পিসিতে বিভিন্ন স্পাইওয়্যার,ভাইরাস অনুপ্রবেশে বাধা দেবে।
২.Antivirus:আধুনিক ট্রোজান হর্স এর মত ভাইরাস প্রতিরোধে অনেক প্রচলিত এন্টি-ভাইরাস কার্যকর নয়।মনে রাখবেন আপনার পিসিকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে হলে চাই আধুনিক,Updated Antivirus Software আপনার কম্পিউটর সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এটা নিশ্চিত হয়ে নেবেন।
ফ্রি ডাউন-লোড কৃত Antivirus এর উপর নির্ভর করবেন না।
নিয়মিত ভাইরাস SCAN করুন।
৩.আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নিরাপদ “Security Policy” নিন,যারা LAN/BLUTOOTH কানেকশন এর মাধ্যমে নেট যোগাযোগ করেন সবাইকে শক্তিশালী পাস্ওয়ার্ড ব্যবহার করতে বলুন।
৪.অনলাইনে আপনার যতগুলো একাউন্ট আছে সেগুলোর তথ্য গোপন কোন স্হানে সংরক্ষন করুন। ই-মেইল আইডি খুলবার সময় আপনার লেখা Security Question & Answer গুলো সংরক্ষন করুন।প্রতি তিন মাসে আপনার ই-মেইল পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।

৫.কখনো অপ্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক সার্ভিস রান করবেন না।ফেসবুকে আপনি বিভিন্ন Application (যে গুলোর ডেভেলপার FB নয়)সেগুলোতে Access করবেন না,এটা করলে ডেভেলপার আপনার সংরক্ষিত সমস্ত তথ্য পেয়ে যাবে।
FB চ্যাট উইন্ডোতে আপনার কোন বন্ধু যদি HTML/Java লিংক দেয় সেটায় ক্লিক করবেন না।
আপনার পিসি যদি হঠাৎ করে অদ্ভুত আচরণ শুরু করে কিম্বা কোন অস্বাভাবিকতা দেখেন তবে ভাল কোন প্রোগ্রামারকে দিয়ে পিসির Vulnerability Test করান।
৬.আপনার পিসিতে সংরক্ষিত সকল তথ্য,মূল্যবান ডাটা ফ্লাশ ড্রাইভ,সিডি-রম ড্রাইভ বা কোন হার্ডডিস্কে সংরক্ষণ করুন।
৭.সময় পেলে নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি সম্পর্কে পড়ুন,জানুন।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জন্য বলছি:-বন্ধু তালিকা আকাশছোঁয়া করার মাঝে কতখানি জনপ্রিয় সেটা বোঝানোর জন্য অনেকে যাকে তাকে নিয়ে নেন এটা ঠিক না।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি অধিকাংশ সংখ্যাটাই হচ্ছে ভূয়া বা ফেক।আপনি একটু লক্ষ্য করলেই তফাতটা বুঝতে পারবেন।তাই বন্ধু পছন্দে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিন।নতুন কাউকে বন্ধু তালিকায় নিলে প্রথমে তার প্রোফাইলে দেয়া তথ্য,ছবি খুটিয়ে দেখেনিন,মনঃপূত না হলে তখনই বের করে দিন।
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।যারা FAKE তারা খুব কম সময়ই আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
তাঁর বন্ধু তালিকায় কারা কারা আছে কি করছে সব পর্যবেক্ষণ করুন।
যাকে তাকে ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার,মেসেন্জার আইডি দেবেন না।
ফেসবুকে যত কম পারেন ছবি/ফোল্ডার রাখবেন।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এখন অনেক উন্নত করা হয়েছে,পূর্বে যেকোনো এলবাম থেকে ছবি নিজের পিসিতে ডাউন-লোড করা কিম্বা অন্যের সাথে শেয়ার করা যেত,এখন সেটা ভুলেও করতে যাবেননা বিশেষ করে কোন বন্ধুর মেসেঞ্জারে শেয়ার করবেন না।
ছবিটি কমপ্লিট ওয়েভ পেজ হিসেবে আপনার কমপিউটরে ডাউন-লোড এবং সেভ হবে হবে তাই শেয়ার করার সাথে সাথে অন্য-প্রান্তে বসে থাকা আপনার বন্ধুটি আপনার ইন-বক্স সহ অনেক কিছু দেখতে পাবে।
নিরাপত্তা জোরদার করতে মোবাইল ফোনটি যুক্ত করতে পারেন,নিরাপত্তা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রাখুন,আপনার ডিভাইসটির একটি গোপন নাম দিয়ে রাখুন।
সর্বোপরি জন্মতারিখ ভুলবেন না,হারানো একাউন্ট ফিরে পেতে এটা জরুরি,এছাড়া কোন একজন বন্ধুর পুরো নাম মনে রাখবেন।
যারা লেখালেখি করেন তারা অবশ্যই সব ব্যাকআপ কপি করে রাখবেন।
ফেসবুকে লগইন করতে আপনার যে ই-মেইল আইডি ব্যবহার করেন তা কাউকে দেবেন না।
আপনার কমপিউটরকে ফেসবুকে Register করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন নিম্নে টিপস দেয়া হল:
Account>account settings>account security>yes>submit>logout>login>register this computer>computer name>ur name>save এটা করার পর আপনি আপনার ই-মেইল এ Confirmation পাবেন।
ই-মেইল এবং ফেসবুক পাসওয়ার্ড আলাদা আলাদা রাখবেন পাসওয়ার্ড অবশ্যই (বর্ণমালা+গনিতিক নাম্বার+সাইন(#abc~123) মিলিয়ে রাখুন।
আপনার কোন বন্ধুর ফেসবুক একাউন্ট হ্যাকারের হাতে পড়ে গেলে তৎক্ষণাৎ তাঁর পাশে দাড়ান,সান্তনা দিন।
পূর্বোক্ত একাউন্ট এর বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ফেসবুকে রিপোর্ট করুন।
ফেসবুকে লগইন করতে আপনার যে ই-মেইল আইডি ব্যবহার করেন সেখান থেকে ফেসবুক অথরিটির কাছে মেইল করুন support@facebook.com,postmaster@facebook.com
এক্ষেত্রে আপনার বন্ধুর নাম,জন্মতারিখ ই-মেইল এড্রেস দিন।
মনে রাখবেন বিপদে বন্ধুর পরিচয়।
বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জন্য বিশাল সুযোগ নিয়ে এসেছে মুহূর্তের মধ্যে আমরা নিজেদের সব কিছু আদান প্রদান সক্ষম হচ্ছি আসুন আমরা সবাই ভালো কিছু শিখি নৈতিকতা বিবর্জিত সকল কাজ থেকে বিরত থাকি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন