জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে ট্যানারি শিল্প আর কারখানা সরানো হচ্ছে না কেন?

বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে ট্যানারি শিল্প আর কারখানা সরানো হচ্ছে না কেন?



বুড়িগঙ্গা, যাকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল আমাদের রাজধানী; সেই বুড়িগঙ্গার বেহাল দশা দেখে মনে হয় মানবজাতির মত নিষ্ঠুর কোনো সৃষ্টি আর দুনিয়ায় নেই।
আমরা প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছি আমাদের প্রকৃতি;আমাদের সৌন্দর্য, আমাদের গর্ব আমাদের উদাসীনতায়,আমাদের লালসার স্বীকার হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।

বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে অনেক আন্দোলন হয়েছে, অনেক পরিবেশবাদী সংগঠন, দেশপ্রেমী জনগণ একটি স্লোগানে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, ''বুড়িগঙ্গা বাঁচাও''।

বুড়িগঙ্গা সহ ঢাকার আশেপাশের নদীগুলো বাঁচাতে বাংলাদেশ হাইকোর্ট এরই মাঝে সরকারকে কতিপয় নির্দেশে অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ,কল-কারখানা বর্জ্য যাতে নদীতে ফেলতে না পারে তার জন্য সংশ্লিষ্ঠ থানার পুলিশকেও আদেশ দেয়া হয়েছে।

এই বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা জেলা প্রশাসন ও বি.আই.ডব্লিউ.টি.এ যৌথ অভিযান চালিয়ে লালবাগের সাবেক সাংসদের মালিকানাধীন পানির ট্যাংক রাখার গোডাউনের আংশিক অংশসহ প্রায় ১০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদও করেছে।

এ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা দূষণের যে সব বিষয়কে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে, তার সবগুলোই মানুষ সৃষ্ট।
কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য:
ঢাকার হাজারীবাগে আনুমানিক ১৭০টি ট্যানারি তার বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি বুড়িগঙ্গায় ফেলছে।
ঢাকার শ্যামপুরের আনুমানিক ৩৬৫টি কলকারখানার বর্জ্যও সরাসরি আসছে বুড়িগঙ্গায়।

আসুন দেখি এসব কলকারখানা সরকারী অনুমোদন পেল কি করে যখন বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ, ১৯৯৭ অনুযায়ী “প্রতিটি কলকারখানার নিজস্ব ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থাকতে হবে যাতে এগুলো থেকে উৎপন্ন যে কোনো বর্জ্য ত্যাগ করার আগে তা পরিবেশপযোগী আর নিরাপদ করে নেয়া হয়।“


এই অধ্যাদেশ কার্যকরী করা হলে তা বুড়িগঙ্গা দূষণ মুক্ত করার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় প্রভাব বিস্তার করত এবং জনগণের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হতো।

৯০ এর দশকের শুরু থেকে নগর পরিকল্পনাবিদদের চাপে বিগত সরকারগুলো ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো গাজীপুর বা আরো দুরে সরিয়ে নেবার ঘোষণা বার বার দিলেও অদৃশ্য কোনো কারণে তার বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে।পুরনো ঢাকার প্রাক্তন দুইজন এম.পির জন্য সরকার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে পারেনি বলে বাজারে যথেষ্ট গুজব রয়েছে।

বিষাক্ত বর্জ্য ছাড়াও বুড়িগঙ্গার অন্যতম শত্রু হলো ভূমি-দস্যু।এখানকার দুজন প্রভাবশালী সাংসদ কালীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, হাজারীবাগ, রায়ের বাজার, বসিলা সহ নদীতীরবর্তী অনেক জায়গা ভরাট, অবৈধ দখল, স্থাপনা নির্মাণের সাথে জড়িত।নওয়াবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বসিলা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ চর বালু ফেলে ভরাট করে হাজার কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে অনেকের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে।

বি.আই.ডাব্লিউ.টি.সি নদী এবং তীরবর্তী ২০০ গজের মালিক হলেও এসব স্থাপনা নির্মাণ রোধে তারা নিঃস্পৃহ আছে দিনের পর দিন।



ভূমি অফিসে কর্মরত, জেলা প্রশাসন অফিসে কর্মরত এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর সহায়তায় এসব অবৈধ জায়গার স্থায়ী বন্দোবস্ত , রেকর্ড,কেনা বেচা হচ্ছে হরদম। লালবাগ কেল্লার মোড় থেকে সওয়ারী ঘাট পর্যন্ত বেড়ি বাঁধের ভেতর হাজার হাজার কাঠা জায়গা এভাবে দখল হয়েছে। এর অধিকাংশের মালিক বি.আই.ডাব্লিউ.টি.সি।

বালু এবং ময়লা আবর্জনা ফেলে বেড়িবাঁধের দুই পাশ ভরাটের চিত্র যত্রতত্র। এই অবস্থার কী কোন উত্তরণ নেই?

অবৈধ দখলদারদের হাতে বেদখল হওয়া এসব জমিন আদৌ কী উদ্ধার হবে?

''বুড়িগঙ্গা বাঁচাও'' বলে আমরা যতই চেঁচাই না কেন, বছরে দুই একটি উচ্ছেদ অভিযান চলবে, আবার আমরা সোচ্চার হব, আবার কানা মাছি ভো ভো খেলা চলবে।
কিন্তু নদী ভরাট রোধ, সরকারী সম্পত্তি ব্যক্তি নামে রেকর্ড, ক্রয়-বিক্রয়,অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ হবে না।

আর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো কেন সরিয়ে নেয়া হচ্ছে না, তার জবাব কেউ দিতে পারবেন?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন