জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১২

আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন দিবস: "CORRUPTION" Your NO Counts

আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন দিবস: "CORRUPTION" Your NO Counts


আজ আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন দিবস। ৩১শে অক্টোবর, ২০০৩ সালে জাতিসংঘ ৯-ই ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। United Nations Convention against Corruption (UNCAC) দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে প্রস্তাব করলে ১২৩টি দেশ এতে স্বাক্ষর করে। এবং পরের বছর মেরিডা, মেক্সিকোতে দিবসটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদযাপিত হয়।

দেশে দেশে দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা Transparency International ২০১১ সালের শেষের দিকে এসে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে যে, "বিশ্বের শকরা ৮০ ভাগ মানুষই দুর্নীতি পরায়ণ সরকারের অধীনে বসবাস করছে।"

দুর্নীতি:
দুর্নীতিকে আভিধানিক ভাবে বলা হয় নীতিবিরুদ্ধ, কুনীতি, অসদাচরণ।

দুর্নীতি দেশে দেশে:
সোমালিয়া, মায়ানমার, আফগানিস্তান, ইরাক, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, সুদান, চাদ, বুরুন্ডি, রিপাবলিক অফ ইকোটরিয়াল গিনি যথাক্রমে শীর্ষ দশ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।
ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, কানাডা, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে যথাক্রমে শীর্ষ দশ দুর্নীতিমুক্ত দেশ।

দুর্নীতি এবং বাংলাদেশ:
একটি জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়ন, যোগাযোগ, আইনের শাসন, বিচার ব্যবস্থা তথা সামগ্রিক উন্নয়ন শুধু মাত্র দুর্নীতির কারণে ভেঙ্গে পড়তে পারে।
দুর্নীতির আশ্রয় প্রশ্রয় দাতারা আমাদের সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে স্বাধীনতার ৪ দশক পরেও দেশ পিছিয়েছে।
সমাজের সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতির খণ্ড খণ্ড চিত্র সবারই জানা।
বাংলাদেশে দুর্নীতি মূলত স্থায়িত্ব পেয়েছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন স্বজন-প্রীতি, ক্ষমতার ভাগা-ভাগি, প্রশাসন এবং জনসেবা-খাত গুলোতে নির্লজ্জ দলীয় করনের কারণে।
দেশে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি গ্রস্ত সেক্টর হবে আইন ও বিচার বিভাগ। আমরা জনগণ যারা আছি তাদের শেষ আশ্রয় স্থল হলো আইনের দুয়ার।
সেখানে ঘুষ-দুর্নীতি এতটাই বেড়েছে যে এদের কাছে গোটা দেশের মানুষ জিম্মি হয়ে আছে

বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের জনগণকে দেয়া নির্বাচনী ওয়াদার অন্যতম ওয়াদা ছিল দুর্নীতি দমন।
টিআইবি ২০০০ ও ২০০১ সালে শেখ হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশকে পৃথিবীর সেরা দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে ঘোষণা করে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
পুরনো ক্ষত এবার মুছে ফেলতে পারবে এমন প্রত্যাশায় জনগণ তাঁদের ম্যান্ডেট দিয়েছিল।
আমরা আশায় থেকেছি দেশে এইবার দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবেনা।

'ফুয়েল ছাড়া ফাইল নড়ে না।' আমাদের প্রধানমন্ত্রীর খেদোক্তি ছিল!
মনে প্রশ্ন জাগে গত তিন বছরে এই রীতিনীতির কি পরিবর্তন হয়েছে?
বাংলাদেশ দুর্নীতিতে এবছর আন-লাকি ১৩-তে অবস্থান করছে। শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতুর টাকা আটকে দেয়া বিতর্ক, দেশের ইতিহাসে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শহীদ মিনারে ঈদ উদযাপন, মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি দেখেও কি আমরা আনন্দে আত্মহারা হবো?

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা দুদক এর মামলাগুলোর মধ্যে শুধু সরকারি দলের ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা প্রায় সাত হাজার মামলা তুলে নেয়া হয়েছে!
বিরোধীদলে থাকলে নিশ্চয়ই এই মামলা গুলো মোকাবেলা হতো! এটা আমাদের সত্যি পীড়া দেয় যে, "ক্ষমতা যখন যার দেশ তখন তার!"


দুর্নীতি দমনে করণীয়:

দুর্নীতি দমন সংস্থা তথা দুদকের অসহায়তা দেখে আমরা জনগণ খুবই লজ্জিত হই!
দুদক কর্ম-কর্তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয় মনে হয় তাদের হাত-পা বেঁধে সাতার কাটতে বলা হয়েছে।
দুদককে সরকারি কর্মকর্তা, আমলা, মন্ত্রী কিম্বা নেতৃবৃন্দের নামে মামলা করতে সরকারের পূর্ব অনুমোদন লাগে!
এই অনুমোদন দলীয় সংকীর্ণতার মোড়কে রেখে দিলে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল সম্ভব নয়।
একটি স্বাধীন কমিশন বা দুদক গঠন অতি জরুরী। যারা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার সাথে কাজ করবে।
যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ, অপরাধ অনুসন্ধানে, অভিযোগ গঠনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে একীভূত করতে হবে। লোকবল বাড়াতে হবে, আইনের প্রয়োগের ক্ষমতা দিতে হবে।
ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
পর্যাপ্ত সাক্ষী প্রমাণ যোগাড়ে এবং সকল সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, নিরাপত্তা ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় সাধন করে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা চালাতে হবে।

আমরা আফ্রিকান দেশগুলোর কাতারে দাঁড়াতে লজ্জাবোধ করছি।
দয়া করে আমাদের আর লজ্জিত করবেন না।


প্রিয় পাঠক: "পাপকে ঘৃণা কর পাপীকে নয়" প্রবাদটি আমরা অনুসরণ করব। নিজেরা কোন প্রকারের ঘুষ-দুর্নীতি. স্বজন-প্রীতিকে প্রশ্রয় দেবো না। ধন্যবাদ।
ছবি ও তথ্য: ইন্টারনেট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন