জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১২

শেষ বিদায়: গুপ্ত হত্যা, মানবাধিকার বনাম সরকারি বয়ান

শেষ বিদায়: গুপ্ত হত্যা, মানবাধিকার বনাম সরকারি বয়ান


"গুপ্তহত্যা হোক, আর অপহরণ হোক, পত্র-পত্রিকা দেখে তদন্ত করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।" আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই প্রথমবার দেখা গেলো পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ঘটনাকে "মিডিয়ার বাড়াবাড়ি" না বলে স্বীকার করে নিতে!
তাঁকে সাধুবাদ দিতেই হয়!
দেশ পরিচালনায় একটি সরকার কতখানি দক্ষ তা বিচার করা হয় দেশে বিদ্যমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করে।


সাম্প্রতিক কালের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, গায়েব করে দেয়া এবং গুম-খুন জনমনে ভীতির সঞ্চার করেছে।
শুধু মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাব অনুযায়ী গত এক মাসে ২৭ জন নিখোঁজ হয়েছে। ২০১০-এর জানুয়ারি থেকে ২০ মাসে দেশে ৩২টিরও বেশি গুম খুনের ঘটনা ঘটেছে।
সঠিক পরিসংখ্যানটি কেউ-ই দিতে পারবেন না।

রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন অতীতেও হয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের আমলে এক শ্রেণীর ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর কাছে মানবতা জিম্মি হয়ে পড়ছে। সরকার নীরব থেকে প্রকারান্তরে
এদের লালন করছে বলেই ধরে নেয়া যায়। নিন্দুকেরা বলেন দেশে বাকশালী প্রেতাত্মা ভর করেছে।
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য ইতিপূর্বে RAB অনেক আলোচিত সমালোচিত ছিল। বর্তমানে RAB অনেক সংযত থাকলেও RAB এবং সাদা পোশাকধারী পরিচয়ে একের পর এক লোকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে।

সংক্ষেপে:
*বর্তমান সরকারের আমলে প্রথম গুম হওয়ার ৭ জুন শিকার হন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ডিসিসি ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম।

*সর্বশেষ সর্বশেষ রাজধানীতে ছাত্রদলের তিন নেতার অন্তর্ধান। ধলেশ্বরী নদীতে গুলিবিদ্ধ তিনজনের লাশ পাওয়া গেছে।

*গত ২রা জুলাই রাজধানীর তেজগাঁও থানার ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান ও তার সহযোগী আলী আকবর গুম হন। তিনদিন পর তাদের লাশ পাওয়া যায় তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে।

* ৪ঠা জুলাই রাজধানী মার্কেট এলাকা থেকে সজল (১৯) ও ইমরান (২০) নামে দুই যুবককে ধরে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। আটদিন পর সজলের লাশ গাজীপুর বাইপাস সড়কের পাশের সমর সিংহ গ্রামের একটি মাঠ থেকে ও ইমরানের লাশ কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া জজ মিয়ার ইটের ভাটার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়।

*১৮ জুলাই নারিন্দা থেকে নুরুল ইসলাম বাবু অথবা ট্যাবলেট বাবু (২৭) নামে এক যুবককে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই দিন পর একই এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায়।

*৩১ জুলাই রাজধানীর দয়াগঞ্জ থেকে জুয়েল উল্লাহ সরকার (১৮) রাজিব উল্লাহ সরদার (২৩) ও মিজানুর হোসেন নামের তিন যুবককে স্থানীয় লোকজনের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারীরা।

*২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি কাজী আতাউর রহমান ওরফে লিটুকে দয়াগঞ্জ থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাক পরা লোকেরা তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকেই তিনি নিখোঁজ।

*১ অক্টোবর গুলশানে যাওয়ার কথা বলে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম দক্ষিণখানের আশ কোনার বাসা থেকে বের হন। এর পর থেকেই তার খোঁজ নেই।

*২ অক্টোবর পল্লবী থানা আওয়ামী লীগ নেতা, ঝুট ব্যবসায়ী আবদুল করিম হাওলাদারকে (৫০) আইন শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর লোক পরিচয়ে বেশ কয়েকজন হাতকড়া পরিয়ে অপহরণ করে। এখন পর্যন্ত তার হদিস নেই।
*৬ অক্টোবর থেকে নবর আলী নামে পল্লবীর অপর এক ব্যবসায়ী নিখোঁজ। পরিবারের দাবি তাকে অপহরণের পর গুম করা হয়েছে।

*গত ৩ ডিসেম্বর পশ্চিম আগারগাঁও থেকে নিখোঁজ হয়েছেন তার মেয়ে-জামাই আবদুল মান্নান (৪৫) ও বন্ধু ইকবাল হোসেন (৪৪)। নূর মোহাম্মদসহ এ তিনজনের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ জানতে পারেননি স্বজনরা।

*যুবলীগ নেতা আফজাল নেতা আফজাল হোসেন। রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। আফজালকে সাদা পোশাকের একদল লোক অস্ত্রের মুখে সাদা মাইক্রো বাসে তুলে নিয়ে যায়। মৃতদেহ নরসিংদীর মাধবদীতে পাওয়া যায়। আফজালের মাথায় চারটি ছিদ্র ছিল। তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাঁর স্বামীকে খুন করেছে।

*গত ৮ই ডিসেম্বর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা সুলতান হাওলাদার ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকেই তার খোঁজ নেই।
১৩ই ডিসেম্বর সকালে উত্তরায় মিটিং-এ থাকাকালীন সময়ে ৭ ব্যবসায়ীকে সাদা পোশাকধারী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পরিচয় প্রদান করে তুলে নিয়ে যাওয়া হলে। সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।

গত দুই বছরে রাজধানীতে এ ধরণের ২০ টি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। প্রতিটি ঘটনায়ই আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট সহ অন্যান্য বিভাগেও এধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসব বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কারণ নির্ণয়ের দায়ভার সংশ্লিষ্ট বিভাগ(পুলিশ,RAB, গোয়েন্দা সংস্থা) তথা সরকারের।

আসুন আমরা সাধারণ মানুষেরা ঘর থেকে বেরোবার আগে যন্ত্রদানব, অজ্ঞান/মলম পার্টি, ছিনতাইকারী, দৈব দুর্বিপাকে মৃত্যুকে স্মরণ করে বাসা থেকে বের হই। যদি বিরোধীদলের কেউ হন তবে শেষ বিদায় ষ্টোরে কন্টাক্ট করে ঘর থেকে বের হবেন।

তথ্য: বিভিন্ন পত্র পত্রিকা এবং ইন্টারনেট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন