জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১২

প্রসঙ্গ বাক-স্বাধীনতা: মত প্রকাশে নীতিমালা বনাম রাজনৈতিক শিষ্টাচার

প্রসঙ্গ বাক-স্বাধীনতা: মত প্রকাশে নীতিমালা বনাম রাজনৈতিক শিষ্টাচার


শুরুর কথা:
সম্প্রতি অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পাঁচ বছর-পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর একটি হোটেলে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের এক রাজনীতিবিদের প্রতি ইঙ্গিত করে ওয়েবসাইটেও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
মুক্ত মত প্রকাশের প্রসঙ্গ ধরে ব্লগিংয়ের বিষয়টি তুলে ধরে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “আমি সবিনয়ে বলতে চাই, মত প্রকাশের নামে যা ইচ্ছা তাই প্রকাশের আমি বিরোধিতা করি।...."
"কোনো ব্যক্তির নামে কল্পকাহিনী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো কথা ব্লগ কিংবা ফেইসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ অনুচিত।"

তিনি আরও বলেন, “সংবাদ মাধ্যম যদি এ রকম লাগামহীন হয়, তবে তার জন্য রাজনীতিবিদদেরই যে বেশি ভুগতে হয়, তা আপনারা (রাজনীতিক) অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝতে পারবেন...এটা এক ধরনের অপরাধ, আর এধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সরকারকে অবশ্যই নতুন আইন করতে হবে।"

আমার কথা:
আমিও তাই বলি মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে যথেচ্ছাচার কারোরই কাম্য নয়।


আসুন দেখি সমস্যা কোথায়:

১।
নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ১৯৯১ সালে দেশটি সংসদীয় গণতন্ত্রে পা রাখার পর থেকে আজ অবধি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়নি।
একটি সংসদও তার ৫টি বছর সরকারী এবং বিরোধীদলের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়নি।
সংসদ বর্জন অব্যাহত রয়েছে, সংসদে বসার মত পরিবেশ কোনো দলই সৃষ্টি করতে পারেনি।
নির্বাচনে হারলে "কারচুপির" দিকে তর্জনী তোলা হয়েছে।
"শান্তিতে থাকতে না দেয়ার হুমকি পাল্টা-হুমকি দেয়া হয়েছে, লাশের বদলে লাশ ফেলার হুমকি অব্যাহত থেকেছে"।

যে বা যারাই নির্বাচিত হয়ে এসেছে তারাই পুলিশকে দলীয় পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করেছে।

দলীয় স্বার্থে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মদদ দেয়া হয়েছে।

প্রশাসন, আইন বিচার, অফিস, আদালত, বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা দেশে নির্লজ্জ দলীয়করণ করেছে।

দুর্নীতিতে নিজেরা গলা পর্যন্ত ডুবেছে, দেশকে ডুবিয়েছে। বিরোধীদলের উপর ফ্যাসিবাদী আক্রমণ চালিয়েছে।

মামলা, মোকদ্দমা, গ্রেফতার নির্যাতন অব্যাহত থেকেছে।

গণতন্ত্র পুলিশের বুটের তলায় নিষ্পেষিত হয়েছে!
রাজনীতি হিংসা, হানা-হানিতে রূপ নিয়েছে।

দুনিয়া এগিয়ে গেছে আমরা এগোতে পারিনি। গণতন্ত্র সুদূর পরাহত মনে হয়েছে।

২।
সারাবিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে আইন করে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়না।
সেখানে রাজনৈতিক শিষ্টাচার শেখানো হয়, সুশিক্ষা প্রদান করা হয়। তথ্য প্রবাহের অবাধ সুযোগ নিয়ে মুষ্টিমেয় কিছু লোক হয়ত মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে
তবে তাদের স্বাভাবিক মানুষ বলে কেউ গণ্য করেনা।

৩।
দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং নিত্য নতুন অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় সংবাদপত্র বা মিডিয়ার পক্ষে অনেক সংবাদ প্রকাশ করা সম্ভব হয়না।
এছাড়া অনেক ঘটনা স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমেও ধামা চাপা দেয়া হয়ে থাকে। অনেক সময় দলীয় পুলিশ বা প্রশাসনের লোকজন দিয়েও আড়াল করা হয়।

এক কথায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দুষ্টের পালন শিষ্টের দমন নীতি পালন করা হয়।

ব্লগ এবং সামাজিক সাইট গুলোর লেখকরা সেটা তুলে ধরছেন। এটা দেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার কারণ থেকে, ভালবাসা থেকেই করছেন।

৪।
আমরা দেখেছি কি করে সারা দেশের তরুণ প্রজন্ম ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছেন।

কিছু ব্লগার বা লেখক দলীয় মতাদর্শ প্রচারে,মহিমা প্রচারে ব্যস্ত। তারাই শুধু দলীয় সংকীর্ণতার কারণে কুৎসিত কথা বলছেন, মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নিচ্ছেন।
এটা করে তারা যে পার পেয়ে যাচ্ছেন সেটা আমি মনে করিনা। দেশের মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। এখন ইন্টারনেটে যেকোনো সঠিক তথ্য-উপাত্ত খুব সহজেই পাওয়া যায়।

এরপরে ভালো কাজের সংখ্যাটাই তুলনামূলক ভাবে বেশি বলে আমার ধারণা।

আইন করে এটার নিয়ন্ত্রণ কি আদৌ জরুরি? নাকি আমাদের মানসিকতার উন্নয়ন জরুরি!

৫।
আমরা শিষ্টাচার কার কাছ থেকে শিখব?
আমাদের দেশে প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল-ই ঘুরে ফিরে ক্ষমতায় আসছে যাচ্ছে।
আমরা অবাক হয়ে তাদের ছেলেমানুষি দেখি,তাদের বক্তব্য শুনি।
তাদের বালখিল্যটা আমাদের কি শেখায়?
একে অপরের প্রতি কাদা ছোঁড়া-ছুড়ি!
যে বা যারা সরকারে থাকে তাঁরা বিরোধীদল ঠেকাতে দলীয় পুলিশ নিজস্ব গুণ্ডা-বাহিনী ব্যবহার করছে।
নেতা-নেত্রীদের বক্তব্য সাধারণ মানুষকে উস্কে দিছে!
তার-ই প্রতিফলন ঘটছে ব্লগ এবং সামাজিক সাইট গুলোতে।
আমরা এখানে এসে কারো শাড়ী,কারো লিপস্টিকের বর্ণনা দিয়ে বিকৃত আনন্দ উপভোগ করছি।
জাতি হিসেবে আমরা কত উন্নত তা প্রমাণে সদা সচেষ্ট থাকছি।


১০ কথার ১ কথা: পরিবর্তন গুলো আসুক দেশের নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-নেত্রীদের কাছ থেকে, সুশীল সমাজ থেকে।
একজন এমেচার ব্লগার তখন আর দেশ ভাবনায় অস্থির থাকবেনা। আইন করে এদের ঠেকাতে হবে না।
ধন্যবাদ।

(সূত্র ও ছবি: ইন্টারনেট)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন