জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১২

ভণ্ড-পীর,অলি:বেঈমান বাবা সমাচার

ভণ্ড-পীর,অলি:বেঈমান বাবা সমাচার



দেশ থেকে আম্মা কিছু বই আর খাবার পাঠিয়েছেন। ছুটির দিনে সেগুলো আনতে চলে গেলাম। জিনিসগুলো আনতে যার বাসায় গেলাম, তিনি বসতে দিলেন। আমি বসে লক্ষ্য করছিলাম; দুই বেড এর একটি ছোট ঘর, মাঝখানে একটি টেবিল পাতা। টেবিলের ওপর বই, চিরুনি, ভেসলিনের কৌটা ছাড়াও বিশাল এক ফ্রেমে বাঁধাই করা একটি ছবি আমার মনোযোগ আকর্ষণ করলো। সেই ছবির ওপর জড়ানো ৪।৫টা তসবি দেখে আমি চমকে উঠলাম। তসবির আড়ালে আবিষ্কার করলাম একটি লোকের ছবি। এমনভাবে সেই ছবি তসবি দিয়ে জড়ানো হয়েছে যে খুঁটিয়ে লক্ষ্য না করলে বোঝার উপায় নেই যে, ছবির লোকটি একটি বিশেষ আসন গেড়ে বসে আছে।

আমাদের ভালো লাগল না। আবার কৌতূহল দমন করাও সম্ভব হচ্ছে না। জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম, ''ভাই, ইনি কে?'' ভদ্রলোক বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেন। আমি গলায় আরো একটু আগ্রহ ঢেলে জিজ্ঞাসা করলাম, ''আহ, বলুন না, ইনি কে? আর আপনি মূর্তি পূজারীদের মত এর ছবি বাঁধাই করে তসবি দিয়ে ঢেকে রেখেছেন কেন? বিশেষ কেউ নাকি?'' আমার সাথে আমার যে বন্ধু গিয়েছিলেন, তিনিও চেপে ধরলেন, ''বলেন ভাই, শুনি।''

ভদ্রলোক বললেন, ''ইনি আমার পীর।'' আবারও আমি প্রশ্ন ছুঁড়ি, ''নাম কি? কোথায় থাকে? তার বিশেষত্ব কি?''

''এনার নাম বেঈমান বাবা...'' অত্যন্ত ভক্তির সাথে ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, ''থাকে অমুক জায়গায়।''

বলে কি? বেঈমান বাবা!! আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, ''আচ্ছা, বাবা যে বেঈমান, সেটা তো বলেই দিচ্ছেন। তার ওপর ভরসা কি? আর আমাদের দ্বীন তো পরিপূর্ণ। পবিত্র কোরান, নবী ও রাসুলগনের দেখানো পথ কি আপনার জন্যেও যথেষ্ট নয়? আপনি যেভাবে এই ছবির মানুষটিকে বিনয় দেখাচ্ছেন, তাকে শ্রদ্ধার্ঘ দিচ্ছেন, তা প্রকাশ্য শিরক! আল্লাহ তো তাঁর সাথে কোনো শিরক পছন্দ করেন না।

ভদ্রলোক বললেন, ''পীর সাহেবের হাত ধরেছি। একজন পীর ৪০,০০০ মুরিদকে সাথে করে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।''


লা হাওলা ওলা কুয়াতা... এই লোক বলে কি?

আমার সাথে বরিশালের এক কোরআন-এ-হাফেজ বন্ধু ছিল সে জিজ্ঞাসা করলো, ''আপনি নামাজ পড়েন?''
''হ্যাঁ, পড়ি।''
''পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কম পক্ষে ৩০ বার সূরা ফাতিহা পড়েন না? সেখানে কি মহান আল্লাহকে বলেন না, ....
”যিনি বিচার দিনের মালিক, আমরা একমাত্র তোমার'ই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমার'ই সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদেরকে সরল পথ দেখাও?''

তিনি বললেন,''বাদ দেন।''
ব্ন্ধুটি, ''কি করে বাদ দেব?''
''হ্যাঁ, বলি।''
''অর্থ জানেন? আপনি কার এবাদত করেন?

মহান আল্লাহ তায়ালা কী বারবার পবিত্র আল-কোরআনে সতর্ক করেন নাই?

"মনে রেখে যারা আল্লাহর(অলি যারা) বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে।"(সূরা ইউনুস, আয়াত ৬২)।(তাই বলে তাঁদের পূজা করা যাবেনা।)

"আর উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর, যা না তাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে, না লাভ এবং বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশ কারী।"(সূরা ইউনুস, আয়াত ১৮)।

"যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এজন্যেই করি,যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়।“(সূরা আল-যুমার,আয়াত ০৩)।

“আর আসমানে কত ফেরেশতাই না রয়েছে যাদের সুপারিশ সামান্যও কাজে আসবেনা যতক্ষণ না আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন, যার উপর তিনি সন্তুষ্ট থাকেন তার জন্য”(সূরা আন্-নাজম,আয়াত ২৬)।

এই যাকে ইচ্ছা অনুমতি দেবেন কথাগুলো আপনাদের পীর বাবাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়নি।
মোফাছ্ছির গন বলেন,কাল কেয়ামতের দিন সকল নবী রাসূলরাই একের পর এক সুপারিশে অপারগতা প্রকাশ করবেন।সকলেই নিজেদের ছোট ছোট ভুলের কথা ভেবে পেরেশান থাকবেন।
একমাত্র রাসূল (সঃ)কেয়ামতের ময়দানে সেদিন সেজদায় নত হবেন তাঁর উম্মতের জন্য সুপারিশ করার অনুমতি পাবার আশায়।আল্লাহ তাঁকেই সেদিন অনুমতি দেবেন।কোন পীর কোন,অলি কে নয়!

সে আবারও জনতে চাইলো,”কে আপনার জন্য শেষ বিচারে সুপারিশ করবে? আপনার ওই বাবা? না কি আমাদের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা?''

আমিও তাল মিলালাম,”বলেন না শুনি!”

ভদ্রলোক ক্রুর দৃষ্টিতে আমাদের ভস্ম করে দিতে চাইলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন