জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

প্রয়াস।

প্রয়াস।



এক.
কত হবে লোকটার বয়স আন্দাজ করার চেষ্টা করেছি অনেকবার মনে হয়েছে ৫০-৫২ হবে,আমাদের একই কোম্পানিতে কেয়ার টেকার।
সাইটে থাকে।
চুল পাকেনি একটাও দাড়ি সব সফেদ,লোকটা চঞ্চল-অস্থির সবসময়।
ফাঁক পেলেই বিড়ি টানে ভূষ-ভূষ..ধোঁয়ার কুন্ডুলী তাঁর চারপাশে।
আমায় বলে স্যার আগামী শনিবার আপনার নিমন্ত্রণ।
হেসে বলি কেন!বিশেষ কোন ঘটনা নাকি!
হুম স্যার, মেয়ের বিয়ে আসছে আষাড়ে,আমার একটাই মেয়ে,আল্লাহ্পাক তাঁকে সৌন্দর্য দেয়নাই,গায়ের রং কালো পাতিলের মতো।
কষ্টে-শিষ্টে টেনেটুনে বি.এ পর্যন্ত পড়িয়েছি,মেয়ের আমার যতনা বয়স বুড়িয়েছে তার বেশি।
কালো বলে ১ টার পর একটা বিয়ে ভেংগে গেছে।
রাজ্যের ফেয়ার এন লাভলী মেখে মেখে ত্বকের ১২টা বাজিয়েছে।
আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে কিছু বলতে চাইলাম পারলাম না!
বলে কালো হয়ে মেয়েদের জন্মানো ঠিক না।
রাজ্যের পণ চায়!আমি ছোট্ট চাকুরী করি,সংসারে অনেক খরচ ২৫ বছর ধরে প্রবাসে পড়ে আছি কিছুই হলনা!
তাঁকে আমার ভাল লেগে গেল।একদিন রাতে ফোন করে ডাকলো বললো স্যার কাল ত আপনার ছুটি যদি একটু পদ-ধূলি দিতেন?দেশ থেকে গরুর গোশত এসেছে,কালিজিরা চাল ও।
গরুর গোশতের কথা শুনে আমার জিভে জল,যদিও ডাঃ এর পুরো বারণ।
রাত ১২টায় ডিউটি শেষ করে ছুটলাম তার বাসায়।
মাংসের সাথে বড় বড় চর্বির দলা,ভদ্রলোক কেটে কেটে সাইজ করছেন!
আমি অবাক বলি এসব খাবেন?
আল্লাহর রহমতে সব খেতে পারি,সব হজম হয়,এতো বেছে আমি চলিনা।তাছাড়া গত ১০ বছরে প্যারাসিটামল আর কাশির সিরাপ ছাড়া কোন ঔষধ ছুঁইনি।
আমি মনে মনে বলি আহা!

দুই।
রাত দেড়টায় সাইট থেকে ফোন এলো।ওপাশে অপরিচিত আর ভিনদেশী কণ্ঠস্বর, মানে করলে দাড়ায় চাচা মিয়া অসুস্থ,তাঁকে নিকটস্থ ক্লিনিকে নেয়া হয়েছে।উনি আমার কথা বলেছেন।
আমি ডাঃ এর সাথে কথা বলি তিনি জানালেন ম্যাসিভ হার্ট এটাক।
খবরটা শুনে চর্বি পিণ্ড গুলোর কথা আগে মনে পড়ল।
ভনভন গাড়ী ছুটিয়ে পৌঁছে গেলাম ক্লিনিকে ডাঃ জানালেন একে শীঘ্র হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে সাইরেন বাজতে থাকলো আর আমি ভয়ে কুকঁড়ে যেতে থাকি।সেইফি একদিন তোর পালাও আসবে!

তিন।
সরকারী এই হাসপাতালটি বি-শা-ল আর অত্যাধুনিক।যুবরাজ সালমান হাসপাতাল!
কয়েকটি মুহূর্ত মাত্র শরীরে বসে গেল সব অত্যাধুনিক যনত্রপাতি,ডাঃ,নার্স ছুটাছুটি শুরু হয়ে গেল।
এক্স-রে মেশিন রোগীর কাছে এলো,বড় মনিটরে সি.টি স্ক্যান ভেসে এলো,শরীরে লেগে থাকা বিভিন্ন যনত্র,আর মনিটরের বিপ বিপ শব্দে আমার বুক হীম বরফ!
ডাঃ আমায় ডেকে বললো এর হার্টে ২টা ব্লক ধরা পরেছে ডান অলিন্দ কাজ করছে না।
আমরা এখন ইন্জেকশন্ দেবো।
বাই দি ওয়ে পেশেন্টের হেল্থ ইনস্যুরেন্স করা আছে?
বল্লাম না'তো!
উনি রেগে গেলেন বল্লেন যান রিসপশন থেকে ভর্তি ফরম আনেন,ভর্তি হোক আগে।

আমি হতাশ। এদেশে নিয়োগ কর্তারা সামান্য ক'টি টাকা বাঁচাতে হেল্থ ইনস্যুরেন্স করান না।
ডাঃ কে বোঝাই দেখ সে অত্যন্ত গরীব মানুষ তুই একটা কিছু কর।
সকাল হোক আমরা সব ব্যবস্হা করবো।
তাঁরা আমায় বলল প্লিজ ওয়েটিং রুম এ যান অপেক্ষা করেন আর আল্লাহ কে ডাকেন।

আমি বসে আছি একা বারবার আমি কেঁপে উঠছি আর ভাবি ভদ্রলোকের সেই কালো মেয়েটার কি হবে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন