জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস!

সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস!


সৌদি আরবে বাঙালিদের ভিসা’র ওপর নিষেধাজ্ঞা (পুরোপুরি বন্ধ হয়নি এখনও, সীমিত আকারে ভিসা ইস্যু হচ্ছে)আরোপের আগ পর্যন্ত দুই ধরনের প্রচলিত প্রথায় এদেশে জনশক্তি রফতানি করা হতো ।
প্রথমত - চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ।

এখানে আদম ব্যবসায়ীদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী লোক নিয়োগ দেয়া হয় । মূলত বিভিন্ন শিল্প কারখানায় নির্মাণকর্মী ও পরিচ্ছন্নকারী কর্মীরা ছাড়াও পেশাজীবীরা এসে থাকেন।

নিয়োগকারী ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান যাতায়াত, চিকিত্সাসহ চুক্তি অনুযায়ী সব ধরনের খরচ দিয়ে থাকেন ।

দ্বিতীয়ত - আমাদের ভাষায় ফ্রি ভিসা ।

দাপ্তরিক শর্তাদি একই থাকে ।

কিন্তু উভয়পক্ষ মৌখিক একটি চুক্তি করে যে 'সে অন্যত্র কাজ খুঁজে নেবে'।

আইন ভঙ্গ করবে না, মাসিক বা বাৎসরিক হিসেবে তার নিয়োগদাতাকে একটি সুনির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ দিতে হবে ।

আবাসিক অনুমোদনের খরচ, স্বাস্থ্যবীমা বা অন্যান্য খরচ কর্মীকেই বহন করতে হবে।

এই অঙ্কটা সময়ভেদে এত বড় যে উদয়াস্ত পরিশ্রম না করে কোনোভাবে-ই তা পরিশোধ করা সম্ভব হয় না।

শুধু যারা ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা ঠিকাদারি করেন তারা এই ভিসায় লাভবান হন ।

যেহেতু নিয়োগকর্তা বেতন, যাতায়াত কিংবা থাকা খাওয়ার কোনো দায়ভার বহন করেন না, সেহেতু এই ভিসায় কোনো অদক্ষ কর্মী এলে তাকে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

প্রথমেই তাকে ভাষাগত সমস্যায় পড়তে হয়।

ভাষা সমস্যার কারণে যে কোনো চাকরি করাই প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

তার চাহিদার কথা, প্রয়োজনের কথা সে বলতে পারে না, বোঝাতে পারে না ।

ফলশ্রুতিতে তাকে দীর্ঘদিন বেকার বসে থাকতে হয়, কিংবা নামমাত্র মজুরিতে অন্য বাঙালিদের অধীনে কাজ করতে হয়।

নিয়োগকর্তাকে বেশির ভাগ শ্রমিক কখনোও চোখে দেখে না।

এখানেও আছে মধ্যস্বত্বভোগী , আদম ব্যাপারির নিজস্ব লোক ; তার কাছে সকাল বিকাল ধরনা দিতে হয়।

যাঁতাকলে পড়ে আগতদের বেশিরভাগ-ই অবৈধ হয়ে পড়ে।

তখন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এমন কোনো কাজে জড়িয়ে পড়ে যার ফলস্বরূপ আমাদের দেশ ও জাতির সুনাম নষ্ট হয় স্বাভাবিকভাবেই।

রাজনৈতিক কোন্দল, অবৈধ প্রভাব বিস্তার, বিভিন্ন দলে-উপদলে, নানা মতে বিভক্ত এখানকার প্রবাসী বাঙালি।

এদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে এরাও সুবিধামতো ভেক বদল করে থাকে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মকাণড বলতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি, ঘরোয়া আলোচনা ছাড়া অন্য কিছু চোখে পড়েনা কেন না এদেশে কোনো দলীয় কর্মকাণ্ড, মিছিল-মিটিং করা সম্ভব নয়।

তাই দুই একজন কর্মী, সমর্থক কিংবা নেতার বিভিন্ন সাংগঠনিক ভূমিকা থাকলেও এমনও দেখা গেছে দলের ন্যূনতম সদস্যপদও এদের নেই।



এই পরিবর্তন আর রূপান্তর অতি দ্রুত ঘটে থাকে এখানকার কূটনৈতিক মিশনগুলোর কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী আর অবৈধভাবে নানান সুযোগ-সুবিধা লাভকারী কিছু বাংলাদেশীর।

বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশনগুলো নিজেদের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, সরকারের কাছে সুযোগমতো তারা নানা রকম মনগড়া সব রিপোর্ট দিচ্ছে - অজ্ঞতার অন্ধকারে থেকে যাচ্ছে সরকার।

তাদের কর্মকাণ্ড, সরকারের পররাষ্ট্রনীতির (মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক) সঠিকতা পরীক্ষা ও বাস্তবায়নে দুর্বলতার কারণে বিশাল সম্ভাবনাগুলো হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে দ্রুত।

বেসরকারি টিভি ও প্রচার-মাধ্যমগুলো এসব বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে খবর প্রচার করার পরও নানা কৌশলে বিষয়গুলো কীভাবে যেন ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে !

জেদ্দাস্হ বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশনে কর্মরতদের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে।

হজ্জ মিশনে বাড়িভাড়া, ব্যবস্হাপনায় দুর্নীতি এমন চরম আকার ধারণ করেছে যে, সরকারি ব্যবস্হাপনায় হজ্জে যেতে এখন অনেকে-ই আগ্রহ বোধ করেন না।

অস্বাস্হ্যকর থাকার পরিবেশ, গাদাগাদি করে হাজিদের রাখা, নিম্ন মানের খাবার, দুর্বল চিকিত্সা ব্যবস্হা ছাড়াও

অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পাসপোর্টে আসা শত শত রোহিঙ্গাও বৈধতা নিয়েছে আমাদের ওই সব অসাধু আমলাদের সর্বনাশা সহায়তায়।

এক রবিবার সকালে আমাদের কোম্পানির এক বাংলাদেশী শ্রমিক পাসপোর্ট নবায়ন করবে জেনে তার সঙ্গী হলাম।

রিয়াদে অবস্থানরত বাংলাদেশ মিশন এর উদ্দেশে গাড়ি ছুটালাম 'ডিপ্লোমেটিক জোন'-এ।

প্রবেশমুখে নিরপত্তা প্রহরী থামালো। 'কোথায় যাবেন?' বললাম,'বাংলাদেশ দূতাবাস'।

সে হেসে দিয়ে বললো এখানে নাই !

সামনে অবাক চেয়ে দেখি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নানান দেশের নানা বর্ণের পতাকা উড়ছে!

'আমাদের দূতাবাস তবে কোথায় ?'

তারা একটা এলাকার নাম বলে সেখানে খুঁজে দেখতে বললো।

আবার ফিরে এলাম।

অনেক খুঁজে পেতে যে ভবনটির সামনে এসে দাঁড়ালাম তা একটি উপ-গলির ভেতর।

আবাসিক এলাকা! সাড়ে ৮ টায় খোলার কথা ; খুললো আরো পরে।

বাইরে বিশাল লাইন, দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসেছে। কেউ নবায়ন, কারও অন্যকাজ।


দেখলাম একজন সফেদ দাড়ি, সুফি-মাওলানা টাইপের এক বুড়ো সবার ওপর খুব হম্বি-তম্বি করছে।

বিষয়টি মনে হয় দু’একজনের ভালো লাগেনি ; তারা প্রতিবাদও করছে।

বুড়ো পুলিশ ডেকে নিয়ে এলো।

পুলিশ এসে অনেককে বেরও করে দিলো।

আমার বন্ধু লাইনে দাঁড়িয়ে। আমি তার জন্য আবেদন ফরম লিখছি।

৪/৫ বাঙালি সালাম দিয়ে পাশে দাঁড়ালো।

বললো, 'স্যার ! আমাদের এগুলো একটু লিখে দিবেন ?'

গোটা দুই লিখার পর বুড়ো এলো । আমায় কৈফিয়তের সুরে জিজ্ঞাসা করলো, 'কি করছেন ?'

বললাম, 'দেখতেই তো পাচ্ছেন, এদের সহায়তা করছি?

পাল্টা প্রশ্ন শোনার জন্য মনে হয় সে তৈরি ছিলো না ।

তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বললো,'আপনি কি দাতা হাতেম তা’ই ?'

মেজাজটা আসলেই বিগড়ে গেলো সকাল সকাল।

বললাম, 'দেখে ত মনে হয়, কত্তো বড় সুফি একজন মানুষ! ব্যবহারটা ভাল করলে কি হয় !' ভদ্রলোক আবারও পুলিশ ডাকতে গেলেন।

আমি তাদের বুঝালাম, সাহায্য করছি এতে এনার কি সমস্যা! দালাল গোছের এবং ভুক্তভোগী ২/১ জন বলে

বসলো, 'আরে ভাই কেনো বুঝেন না, এটা ওনার ব্যবসা! ওনি ৫/১০ টাকা পান এসব করে।'

তার সম্পর্কে অনেক দুর্ভোগ ও হয়রানি করার অভিযোগ শুনলাম। ভেবে অবাক হলাম ।

বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার বয়সসীমা কত মনে করতে পারছিলাম না !

তার এই ঔদ্ধত্যের কথা ভেতরে চিকন বাতাস খাওয়া কর্মকর্তাদের কানে কি আদৌ কখনো পৌছেনি !

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন