জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

মেদা অইছে মেদা

মেদা অইছে মেদা



আমার এক বন্ধু রিয়াদ থাকে। বিয়ে করেছে ৮ বছর। বৌ পরিবার পরিজন দেশে থাকে।
এখনে সে খুউব ভালো আছে। একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর চালাচ্ছে চুক্তিতে। আয় ইনকাম ভালো বেশ। দেশে জমিজমা করেছে প্রচুর।
বিয়ে করার পর থেকে সে ছ’মাসে, ন’মাসে দেশে যায় দু-তিন মাস থেকে আসে। দীর্ঘ বিবাহিত জীবনে তাদের সন্তানাদি হচ্ছিল না।
একটি সন্তানের আশায় তারা হুজুরের তাবিজ-কবজ মাদুলি সব-ই নিয়েছে লাভ হয়নি।
'অমুক হুজুরের দোয়ায় তমুকের বিবাহের ২০ বছর পর সন্তান লাভ' বিজ্ঞাপন দেখে ঢাকার সায়েদাবাদ, মিরপুর, এই বাবা ঐ বাবা,
ডাক্তার শেষ করে হতাশ।
সংসারে অশান্তি। মা বলে, 'বৌ বাঁজা ; তুই আবার বিয়ে কর।' ছেলে বলে 'সম্ভব না।
যদি আমি বাঁজা হতাম তবে তোমাদের বৌ কি আরেকটা বিয়ে করতো !'
বুঝলেন সাইফ ভাই সিলেট মাজারে গিয়েছি। মাজারে বিশাল সাইজের গজার মাছের মাথায় হাত বুলিয়েছি,
পানি এতো নোংরা হয়ে আছে কি বলবো, মনে হচ্ছিলো মাছগুলো অনেক কষ্টে আছে।
বৌ সেই পানি বোতলে ভরে নিয়ে এসেছে হোটেল রুমে ! আমি ঘুমের ভান করে পড়ে আছি।
তার চোখ মুখ জলে ভেজা। নিঃশব্দ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে বার বার। বিড় বিড় করে কি জেনো দোয়া পড়ে চোখ বন্ধ করে পানিটুকু খেল।
আমি হতবাক ! তার মতো আধুনিক, শিক্ষিতা মেয়ে। এমন অন্ধ বিশ্বাস !
নাকি সে যা করছে তা শুধু সংসার ছেড়ে কোথাও যাবার যায়গা নেই বলে !
যা হোক সেবারও কিছু হলো না। আপনি আসার কিছুদিন আগে ছুটিতে গিয়েছিলাম।
আল্লাহ্‌ এবার মুখ তুলে চেয়েছেন। আমি বলেছি খবরটা নিঃসন্দেহে মধুর।
কল্পনা করতে চেষ্টা করলাম কোমল, শান্ত একটি বৌ ক্রমাগত বুড়ো শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদের খোঁটা শুনছে।
কল্পনাটা ভাল লাগলো না।

স্বামী-স্রীর তর সইছে না। এপাশ থেকে স্বামী সোচ্চার, গাইনি ডাক্তার দেখাও। ছেলে হবে না মেয়ে হবে !
আমায় ফোন করে ঘন ঘন। 'সাইফ ভাই!ভালো গাইনি ডাক্তার কে আছে কাকে দেখানো যায় ?'
উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। এক সপ্তাহে গিয়ে দেখি দেশ থেকে বই আনিয়েছে 'নবজাতকের সুন্দর নাম'।
গত কয়েকদিন যাবত তার খোঁজ-খবর নেই দেখে গতকাল গেলাম তার বাসায়।
তাকে পেলাম না। পেলাম তার বড় ভাইকে। আমায় দেখে কুশলাদি জানালেন। বললেন, 'খবর পেয়েছেন?'

-'কী খবর বলেন তো?'

'আপনের দোস্তের মেদা অইছে।'
-'কী হয়েছে বললেন ?'
'মেদা হয়েছে, মেয়ে হয়েছে !'
'কী বলেন, এটা কী ভাষা ?
' তিনি বললেন, 'এটা বিকৃত ভাষা।
নিজে কালা কুইট- কাট্টা, বউ কালা, মেয়ে কালা হবে, বিবাহ হবে না।

মোটামুটি শিক্ষিত একটা ছেলে আর্থিক ভাবে সচ্ছল, সে এসব কী ভাবছে ?
আমি তাকে বললাম, 'আল্লাহ্‌ পুরুষ ও নারীকে সম-মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন।
একে অপরের পরিপূরক করেছেন। নারীর জন্ম না হলে দুনিয়ায় শুধু পুরুষের কাজটা কী হতো !'
আল্লাহ্‌ তা'য়ালা পবিত্র কোরআন এ সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন (যার মানে এমনটা দাঁড়ায়) "এবং যখন এমন খবর (জন্মের)
মেয়ে (সন্তান) তাদের কারো কাছে আনা হয়, তার মুখমণ্ডল অন্ধকার এবং সে ভেঙ্গে পড়ে, নিজেকে লুকিয়ে রাখে...(সূরা: ১৬-৫৮-৫৯)

তাকে বুঝাবার চেষ্টা করলাম, তিনি বললেন, 'মেয়ে বিয়ে দিলে পরের ঘরে চলে যাবে আর যাবার সময় কাঁড়ি-কাঁড়ি টাকা-পয়সা সোনা-দানা নিয়ে যাবে।
বংশ-প্রদীপ দরকার। এসব সহায় সম্পদ দেখে রাখবে কে ?
' তাকে বললাম ভারতে একটি প্রবাদ আছে ‘ছেলে ততক্ষণ ছেলে থাকে যতক্ষণ না বিয়ে করে।
আর মেয়ে সারাক্ষণ মেয়ে থাকে ; যাক না সে পরের ঘরে।' তর্ক চলতে থাকলো।
এরই মাঝে বন্ধুটিও যোগ দিলো। তাকে বললাম, 'একেই বলে লা শোকর !
আরে মিয়া গজার মাছের মাথা ছুঁয়ে মান্নত করেছ, পচা ময়লা পানি খেয়েছ সন্তানের আশায় আর আল্লাহ যখন
দিয়েছে তখন তার শোকর আদায় না করে মুখ কালো করে বসে আছো !
শেম অন ইউ।'
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা বলেছেন, 'তোমাদের মাঝে যে কেউ দু’টি কন্যা উপযুক্তভাবে গড়ে তুলবে,
কেয়ামতের দিন সে আমার খুউব নিকটে থাকবে।'

একটি ছেলের যতখানি অধিকার আছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সহযোগিতা, সেবা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে মেয়েদের একই অধিকার রয়েছে।
ইয়া মুক মাফি (আরবিতে বোকা), আমাদের বর্তমান পি.এম, প্রাক্তন পি.এম - দু'জনই কিন্তু মেয়ে, মহিলা, বলে হাসলাম।
সে লজ্জা পেলো। বললো, 'সাইফ ভাই ! লজ্জার কথা কী বলবো , আমার মা এবং বোনেরা এখনও আমার মেয়ের মুখ দেখেনি !'
আমি তার কাঁধে হাত রেখে বললাম, 'মন খারাপ করো না ।
এই মেয়েটিকে তোমরা একদিন বাঁজা বলে অপবাদ দিয়েছ, একবার ভাবো,
তোমার মায়ের কথা শুনে যদি তাকে তালাক দিয়ে আরেকটি বিয়ে করতে সেই মেয়েটির গর্ভে যদি আজকের মতোই একটি মেয়ে হতো !'
সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
বললাম 'দেশে ফোন করেছো ?'
'না করিনি।'
'ফোন করো।'
মিষ্টি আনাও।
রসগোল্লা আনাও আজ পেট পুরে রসগোল্লা খাবো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন