জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১২

মাদকাসক্তির ভয়াবহ বিস্তার রোধ: চাই সামাজিক আন্দোলন-১

মাদকাসক্তির ভয়াবহ বিস্তার রোধ: চাই সামাজিক আন্দোলন-১


( ‘Life Does Not Rewind' শ্লোগানে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় আগামী “২৬শে জুন আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস” বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা(ইউএনওডিসি) নেতৃত্বে পালিত হতে যাচ্ছে। জনসাধারণের মধ্যে বিশেষত যুবকশ্রেণীর মধ্যে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও কুফল সম্পর্কে সার্বিক সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আপনিও এগিয়ে আসুন। মাদকাসক্তির ভয়াবহ বিস্তার রোধে, এর কুফল এবং মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশের সদিচ্ছা রাখছি।
)


মাদকাসক্তি বাংলাদেশে অন্যতম একটি জাতীয় সমস্যার নাম। বিগত বছরগুলোতে মাদকের বিস্তার ও অপব্যবহার গোটা যুব সমাজের উপর আঘাত করেছে তার ভয়াবহতা নিয়ে।
নেশা একটি নাম, কোন বস্তু বা দ্রব্যের শিরোনাম নয়। নেশাকে সংজ্ঞায়িত করতে হলে বলতে হয় এমন কিছু দ্রব্য, ঔষধ কিম্বা উত্তেজক ঔষধ, উপাদান যা ব্যবহারে একধরনের মানসিক প্রশান্তি, কল্পনা ও বাস্তবের মাঝা-মাঝি বিচরণ, স্নায়ু বৈকল্যের কারণে দেহে তীব্র সুখানুভূতি, হেলুসিনেশন, মতিভ্রম হতে পারে যা খুব সাময়িক। মূলত এই ঘোর লাগাটা বেশীদিন থাকেনা। মাদকের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান মানব দেহের উপর স্থায়ী এবং ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে এর উপর নির্ভরতা সৃষ্টি করে।
এক কথায় একজন মানসিক রোগীতে পরিণত হওয়া অস্বাভাবিক ব্যক্তিটিকে আমরা মাদকাসক্ত বলে থাকি। (চিকিৎসা বিজ্ঞান মাদকাসক্তদের মানসিক রোগী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে অনেক আগেই)।
একজন নেশা সক্ত ব্যক্তি নেশা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষণকালের জন্য ভিন্ন এক লৌকিকতায়, ভিন্ন প্রশান্তির জগতে প্রবেশ করে। হতাশা, ব্যর্থতা, দুঃখ, ক্ষোভ থেকে ক্ষণকালের জন্য মুক্তি কিম্বা প্রশান্তি পেতে হলেই যেন একটা অবলম্বন হিসাবে নেশাকে দাড় করানোর প্রতিযোগিতা চলে! বলা যায় শুধুমাত্র এডভেঞ্চারের আশায়, বন্ধু-বান্ধবের কু-প্ররোচনায় পড়ে অনেকে নেশা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং ধীরে ধীরে এর উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠে।
নেশা বা মাদকাসক্তি নামক দীর্ঘস্থায়ী, যন্ত্রণাকর এই অধ্যায়টিকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে ঠিক কবে যে আমাদের গোটা জাতির মাঝে অঙ্কুরিত করা হয়েছে তা নিয়ে হয়ত কারো কোন মাথা ব্যথা নেই, তারপরেও মাদকদ্রব্যের নগ্নতা, ভয়াবহতার নীল দংশন আমাদের যুব সমাজকে মহামারীর মত গ্রাস করছে।
মাদকের প্রতি ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়ছে নতুন প্রজন্ম, ঠিক যেন একটি বিভীষিকা, জীবনকে পলে পলে দগ্ধ করার জীবনের সমস্ত চেতনাকে লুপ্ত করার, নাগরিক জীবনের সমস্ত আশা আকাঙ্ক্ষাকে আতুর ঘরে গলা টিপে মেরে ফেলবার অপ-প্রয়াস!

মাদকের অপব্যবহার ও কুফল সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা, উদাসীনতা, সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থতা কোন অংশে কম দায়ী নয়।
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারের ফলে সামাজিক ভাবে যেমন অস্থিরতা, অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে ঠিক তেমনি মাদকাসক্তরা আমাদের এক নাম্বার জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমশ: ঘৃণায় রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মাদকাসক্তরা নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অন্ধকার গলিতে। সামাজিক ভাবে সম্ভ্রম হারিয়ে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে আমাদের সমাজ থেকে। বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিক সু-অধিকার থেকে অনেকের সুন্দর শিক্ষা জীবন ধ্বংস হচ্ছে। এর জন্য কি মাদকাসক্তরা-ই এককভাবে দায়ী?

মাদকাসক্তির কুফল এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

*শাররীক ও মানসিক কর্মক্ষমতা হ্রাস, জটিলতা যেমন লিভারে প্রদাহ, হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার, এইডস সংক্রমণ, যৌন অক্ষমতা, হৃদরোগ, ফুসফুসে টিউমার, ক্যান্সার, কিডনি বিকল, মানসিক বিকারগ্রস্ত হওয়া নিশ্চিত।

*শিক্ষা, চাকুরী কিম্বা যে কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া।

*অপরাধ প্রবণ হওয়া। গোটা দেশে যত সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণ বাণিজ্যের মত সংঘবদ্ধ অপরাধ, মাস্তানি হয়ে থাকে মাদকাসক্তিকে তার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

* মাদকাসক্তির কারণে দাম্পত্য কলহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ বাড়ছে।

*পরিবারের সদস্যদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা, (অধিকাংশ সময় মাদকাসক্ত ব্যক্তিটি নেশার টাকা জোগাড়ে চুরি, ডাকাতি করে থাকে, ঘরের বিভিন্ন আসবাব-পত্র, ঘড়ি, মোবাইল,দামী কিছু) তাঁদের আর্থিক অনটনের মধ্যে ফেলে দেয়া।

*আত্মহত্যা প্রবণ হওয়া, চরম উত্তেজনা ও উচ্ছৃঙ্খল হওয়া এবং বড় ধরনের কোন অপরাধ সংগঠনে বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করা। রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টিমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি।
বাংলাদেশে যে ধরনের মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার হয়ে থাকে :

*অপিয়ামের নির্যাস থেকে প্রস্তুত আফিম, হেরোইন, মরফিন, প্যাথেডিন, কোডিন ফসফেট, ফেনসাইক্লিডাইন, নিকোকোডেন

*মারিজুয়ানা, গাঁজা, চরস

*মেথামফেটামাইন , এ্যাম্ফেটামিন জাতিয় উদ্দীপক, ইয়াবা, হিপনোটিক ঔষধ

*ঘুমের ঔষধ, টিডিজেসি ইনজেকশন

*এলকোহল (মদ, বিয়ার, স্পিরিট, এলকোহল জাতীয় তরল) ইত্যাদি ছাড়াও নানাবিধ নিষিদ্ধ ঘোষিত ঔষধ এবং উপাদানের অপব্যবহার মাদক দ্রব্যের মধ্যে অন্যতম।
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন