জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১২

সৌদি আরব: শ্রম বাজার,রপ্তানি আয়-এ সম্ভাবনার হাতছানি

সৌদি আরব: শ্রম বাজার,রপ্তানি আয়-এ সম্ভাবনার হাতছানি

৮,৩০,০০০ বর্গমাইলের বিশাল এক দেশ সৌদি আরব।
দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ২,৭১,৩৬,৯৭৭।
সরকারি হিসেবে আবাসিক অনুমোদন প্রাপ্ত প্রবাসীর সংখ্যা ৮৪ লক্ষ।
প্রাকৃতিক সম্পদ তেল ও তেল-জাত পদার্থে সমৃদ্ধ দেশটির বাজেটের ৭৫% রাজস্বের প্রায় ৯০% ই আসে এই খাত থেকে।
এ ছাড়াও পর্যটন খাত, বিশেষ করে হজ্ব ও উমরাহ পালন করতে আসাদের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।

দেশটি ইসলামী শ’রিয়াভিত্তিক আইন অনুযায়ী চলছে।
ঘুষ-দুর্নীতি-চুরি-লুটপাট কিংবা আইনের অপপ্রয়োগ কল্পনাও করা যায় না এ দেশে।
এ বিষয়ে অনেকে দ্বিমত পোষণ করলেও একটি কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি, একজন ট্যাক্সিচালক যে বাংলাদেশে ট্রাফিক আইন মানেনি কোনোদিন, ধরা পড়লে কোনোভাবে ‘ম্যানেজ' করেছে, এখানে সেটি সম্ভব নয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোটা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে উৎপাদন-বর্ষা থমকে গেছে, খোদ আমেরিকায় বড় বড় সব ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে, কর্মী ছাঁটাই হয়েছে।
অনেক দেশ ধাক্কা সামাল দিতে নানাভাবে কৃচ্ছ্রতা সাধন করেছে। কিন্তু তার আঁচড় কিংবা মারাত্মক ছায়া এ দেশটিতে তেমনিভাবে দেখা যায়নি।

শ্রমবাজার ছাড়াও সৌদি আরবে রয়েছে বাংলাদেশী পণ্য - যেমন সিরা মিক্স, গার্মেন্টস, হস্তশিল্প, চামড়া-জাত পণ্য, পাটজাত পণ্যের বিশাল বাজার।
এই বিশাল বাজার ভারত ও চীন দখল করে নিচ্ছে।

দেশটিতে নিম্নোক্ত খাত গুলো ছাড়াও বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে;সরকারি অফিস-আদালতগুলো ছাড়াও সর্বত্র, বিশেষ করে ৫টি সেক্টর উল্লেখযোগ্য -
(১) নির্মাণ-শিল্প-সংশ্লিষ্ট যথা -প্রকৌশলী, (ডিপ্লোমাসহ), কার্পেন্টার, নির্মাণ-শ্রমিক, বিদ্যুৎ, যন্ত্র ও প্রকৌশলে কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, টাইলস ও সিরা-মিক্স, রং, ওয়েলডারসহ সব ধরনের দক্ষ শ্রমিক।
এসব কাজের মজুরী অত্যন্ত সম্মানজনক। বর্তমানে এই খাতটিতে নির্মাণ-শ্রমিক হিসেবে বাঙালিরা কাজ করলেও এটি পাকিস্তানিদের নিয়ন্ত্রণে।

(২) স্বাস্থ্যসেবা খাত-সংশ্লিষ্ট যথা - ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক, ফার্মাসিস্ট, আয়া, পরিচ্ছন্ন-কর্মী। এখানে ভারতীয়রা এগিয়ে আছে, এ ছাড়াও মিসরীয়রা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও আমাদের অবস্থান পরিচ্ছন্ন-কর্মী হিসেবে, আর হাতে গোনা যাবে এমন কিছু ডাক্তার আছেন। বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি এখানে খুবই সম্মানজনক।
প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এই খাতে প্রবেশের।

(৩) সাধারণ সেবা, বিক্রয় ও বিপণন - সুযোগ রয়েছে অত্যাধুনিক ও বিশাল মলগুলোতে সেলস-ম্যান এর কাজ করার।
গ্রোসারি ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ফোন এর ব্যবসা করার সুযোগও রয়েছে।
বস্ত্র, প্রসাধনী, হোটেল, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, বিক্রয়-বিপণন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির পরিবেশক হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এদেশে ওষুধ ও চিকিৎসা-সামগ্রীর বিশাল বাজার রয়েছে। বাংলাদেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় এখানে ওষুধের দাম অনেক, অনেক বেশি।
ধরা যাক, গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ Ranitidine hcl 150mg বাংলাদেশে মাত্র ২ টাকা ।
আর এখানে ২ রিয়াল (১ রিয়াল ১৮.৫০ টাকার সমপরিমাণ), Omeprazole(20mg) বাংলাদেশে মাত্র ৪ টাকা, এখানে ৪ রিয়াল।
স্হানীয় ভাবে এখানে ওষুধ প্রস্তুত, বিক্রয় ও বিপণন হলেও ইউরোপ, আমেরিকা, জর্দান, দুবাই, মিসরের ওষুধ ও প্রসাধন সামগ্রীতে বাজারটি সমৃদ্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশী ওষুধ তুলনামূলকভাবে সস্তা হওয়ায় খুব সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।
এখানকার ফার্মেসিগুলোতে দক্ষ ফার্মাসিস্টদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।

(৪) ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে হালকা ও ভারি যানবাহন, অফিস কিংবা বাসা-বাড়ির গাড়িচালক, ট্যাক্সি-ক্যাব চালকদের জন্য।

(৫) আই,টি ক্ষেত্র, কমপিউটর প্রোগ্রামার, সফটওয়্যার ডিজাইনার, ডাটা-এন্ট্রি অপারেটর, হিসাব-বিজ্ঞান, সেক্রেটারি, দক্ষ ব্যবস্থাপক, ব্যবসা প্রশাসক, শিক্ষকসহ নানা পেশাজীবীর জন্য প্রতিনিয়ত কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।

এ ছাড়াও ফসল, যেমন গম, ভুট্টা, শাক-সবজি, ফল ও খেজুর বাগান, গবাদিপশু লালন-পালন, বিনোদন কেন্দ্র, ক্যাটারিংসহ নানা খাতে প্রবেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
একজন পেশাজীবী,দক্ষ শ্রমিক অত্যন্ত ভালো বেতন,বাসা,চিকিৎসা সেবা,যাতায়াতের খরচ সব নিয়োগ কর্তার নিকট হতে পেয়ে থাকেন।

সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের শীতল সম্পর্কের সূচনা হয় বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে।যা এখনও কাটেনি।
প্রকারান্তরে সৌদি আরব বাংলাদেশ সম্পর্ক বিএনপি-জামাত ঘেঁষা বলে দায় এড়ানোর হাস্যকর প্রচেষ্টাও আমরা দেখেছি।

প্রকৃত সত্য হল তৃতীয় বিশ্বে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশ গুলোকে পুরো মাত্রায় নির্ভর করতে হয় আইএমএফ,বিশ্ব ব্যাংক আর পশ্চিমা পরাশক্তির দেশ গুলোর প্রেসক্রিপশনের উপর,স্বভাবতই জাতির কাঁধে সওয়ার হওয়া এই শোষক গোষ্ঠী চায়না আমরা আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখি।

ইসলামি দেশ কিম্বা জঙ্গিবাদের ভয়ে ভীত এসব দেশ আমাদের যা গেলায় আমরা বুঝে হোক কিম্বা না বুঝে তা হজম করতে চেষ্টা করছি!
ভারতের রাজনীতি স্যেকুলারিষ্ট,দেশটির বিদেশনীতি,দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতা তাঁদের আকাশ চুম্বী সফলতা দিচ্ছে।
খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনমোহন সিং সৌদিআরবে এসে গেছেন কিছুদিন আগে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ বলে কিন্তু সৌদি আরব সরকার তাঁদের এড়িয়ে যায়নি।
একের পর এক দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি হয়েছে,শ্রমবাজারে তাঁরা ডুকে পড়ছে,গার্মেন্টস,হস্তশিল্প,ঔষধ,আইটি সহ সকল ক্ষেত্রে তাঁদের জয়জয়কার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনমোহন সিং সৌদিআরবে এসে বাতহা নামক প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায় সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদের সাথে রাত কাটিয়ে গেছেন সকল প্রটোকল ভেঙ্গে।

আর আমাদের দেশে মন্ত্রী,আমলাদের সফরের চিত্র ভিন্ন!তাঁরা আমাদের সমস্যার কথা শোনেন না।মিশনগুলোতে কর্মরতদের মনগড়া রিপোর্ট নিয়ে নিশ্চিন্ত হোন।দলীয় চাটুকারদের কথায় বিগলিত হয়ে ফিরে যান। দেশে ফিরে আশার কথা শোনান;কার্যত তা কখনও বাস্তবায়ন হয়না!

ক্ষমতা গ্রহণের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,বাণিজ্যমন্ত্রী সহ অনেকেই সৌদি আরবে সফর করে গেছেন।তখন অনেক আশার কথা শোনা যাচ্ছিল।বাস্তবে শ্রমিক সমস্যার কোন সমাধান না হলেও হয়রানি বন্ধ করেছে এদেশের সরকার।

বিপুল জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ।
সীমাবদ্ধ সম্পদের কথা মাথায় রেখে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি,রপ্তানি আয় বৃদ্ধি,বিদেশে নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে নিয়ে দেশকে সমৃদ্ধির
পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের এই শতাব্দীর সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে।সরকারের সময়োপযোগী হস্তক্ষেপে দুইটি ভাতৃ প্রতিম দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।নতুন কর্ম সংস্থান,রপ্তানি বাণিজ্যের সুযোগ ঘটবে এমনটি ই আজকের প্রত্যাশা।

সাইফ ভূঁইয়া
রিয়াদ,সৌদিআরব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন