জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

একুশ কোনো শোকগাথা নয় : ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস-২

পূর্ব প্রকাশের পর



উত্তেজনা কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলে ১৯৫২ সালের ২৬শে জানুয়ারি পাকিস্তান এসেম্বলির নীতি নির্ধারক কমিটি ঘোষণা করে, ''উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা।''
ঢাকার পল্টন ময়দানের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন একই সুরে বলেন, "Urdu alone will be the state language of Pakistan"
পর পর দুটি ঘোষণা বাঙালির রক্তে আগুন ঢেলে দেয়। ফুঁসে উঠে গোটা দেশ।
২৮শে জানুয়ারি, ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাদেশিক মন্ত্রীদের মিটিঙের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
৩০শে জানুয়ারি, ১৯৫২ আওয়ামী লীগ কম্যুনিস্ট ফ্রন্ট এবং অন্যান্য সংগঠনগুলোর সাথে এক গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সভায় সকলে একমত হয় যে, "শুধু মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনে ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত হবেনা"। সমমনা দলগুলো ছাত্রদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত দেয়। মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ব্যাপারে ঐক্যমত্য হয়।

৩১শে জানুয়ারি, ১৯৫২ মাওলানা ভাসানী সভাপতিত্বে সব দলের সমন্বয়ে একটি সভা হয় যেখানে আবুল হাশিম, হামিদুল হক চৌধুরী সহ বিখ্যাত সব নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সর্ব সম্মতিক্রমে অল পার্টি একশন কমিটি (ACPA)গঠিত হয়। আহবায়ক করা হয় কাজী গোলাম মাহবুবকে। মাওলানা ভাসানীকে চেয়ারম্যান করা হয়। আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয় আওয়ামী লীগ, স্টুডেন্ট লীগ, যুব লীগ,খিলাফতে -রাব্বানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠন "ভাষা সংগ্রাম কমিটি অব একশন"।

৩রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ "কমিটি অব একশন" সংখ্যাগরিষ্ঠদের দাবীকে পদদলিত করার প্রতিবাদে সভার আয়োজন করে। মাওলানা ভাসানী ছাড়াও আবুল হাশিম সহ অনেকে বক্তব্য প্রদান করেন। এই সভায় পূর্ব বাংলার এসেম্বলিতে বাজেট ঘোষণার দিন অর্থাৎ ২১শে ফেব্রুয়ারি স্ট্রাইক ঘোষণা করা হয়।
স্ট্রাইক রুখে দিতে ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২১শে ফেব্রুয়ারি সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে স্ট্রাইক পালিত হয়। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এক সভার আয়োজন করে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে প্রাদেশিক এসেম্বলির দিকে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। ছাত্র মিছিল পুলিশ টিয়ার গ্যাস সেল নিক্ষেপ করে, লাঠি চার্জ করে। জবাবে ছাত্ররাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সহ আশেপাশের গোটা এলাকায়।

বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে বিক্ষোভরত ছাত্রদের উপর পুলিশ নির্বিচার গুলিবর্ষণ করলে মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, আব্দুল জব্বার, আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমেদ এবং আব্দুস সালাম সহ ৫ জন ছাত্র শহীদ হয়।
ছাত্র হত্যার ঘটনা ঢাকা সহ সারাদেশে আগুনের হল্কার মত ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত হাজার হাজার জনতা ঢাকা মেডিকাল কলেজ চত্বরে জড় হতে থাকে।

পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শহীদদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে জনতা শোক মিছিলের প্রস্তুতি নিলে পুলিশ আবারও গুলি করে। গুলিতে ৪ জন নিহত হয়। উত্তেজিত জনতা সরকার সমর্থিত একটি পত্রিকা অফিস জালিয়ে দেয়।

উত্তাল জনসমুদ্র নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎকালীন সরকারকে সেনা বাহিনীকে তলব করতে হয়।
পরিস্থিতির চাপে মুখ মন্ত্রী নুরুল আমিন বিধান সভায় বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দানের সুপারিশ করলে সাথে সাথে তা বাতিল হয়ে যায়।
(চলবে)

একুশ কোনো শোকগাথা নয় পর্ব-2: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন